লেখক জাকির তালুকদার যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার ফিরাইয়া দিছেন, এইটারে বেশী বড় কিছু ভাবার যৌক্তিকতা নাই।

তিনি যখন পুরস্কারটা পাইছিলেন তখন তার যে পরিমাণ সম্মান বাড়ছিল, দশ বছর পরে ফেরত দেয়ায় এর চাইতে কম বা এর সম পরিমাণ, বা আরো আশাবাদী বিচারে দ্বিগুণ সম্মান হইতে পারে। এর বেশি কিছু না।

ধরা যাক, পুরস্কারে তার এক ছটাক সম্মান বাড়ছিল। এখন দশ বছর পরে ফেরত দেয়ায় এক কেজি সম্মান বেড়ে গেল, এটা অস্বাভাবিক কথা।

তালুকদার যখন পুরস্কার পান, সম্ভবত এর পরে তার এক পোস্ট পড়ছিলাম মনে পড়ে। ঐখানে তিনি একটা জাস্টিফিকেশন দিছিলেন পুরস্কারের। যে, বাংলাদেশের লেখকেরা কিছুই পান না। পরিবারের কাছে ব্যর্থ বিবেচিত হইতে থাকেন। ফলে বড় পুরস্কারে পরিবারের মান বৃদ্ধি হয়, এই লজিকের মত কিছু একটা। লেখক শাহাদুজ্জামান একাডেমী পুরস্কার পাবার পরে যে কমলালেবুর জাস্টিফিকেশন দিছিলেন, ওইটা থেকে তালুকদারেরটা বেশি সৎ মনে হইছিল।

যমুনা টিভির রিপোর্টে দেখলাম তালুকদার এইরকম বলছেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের নানা অজুহাতে পাশ কাটিয়ে একাডেমী নিজ ইচ্ছায় পুরস্কার দেয়। এখন সচেতন মানুষের কাছে একাডেমীর মর্যাদা নেই। ইত্যাদি।

যখন তিনি পুরস্কার নিছিলেন, তখন কি একাডেমী ভালো ছিল?

নাকি এখন ‘নিম্নমানের’ লোকদের পুরস্কার দেয়া হইতেছে, তাদের নামের সাথে নিজের নাম দেখতে চান না, এইজন্যই তালুকদারের এই বর্জন?

এইরকম যদি হয়, তাহলে মজার সমস্যাটা এই জায়গায়, অনেকে পুরষ্কার পাইলে তা ফেরত দিতে পারবেন না কারণ ফেরত দিলে ফেরত দেয়া তালুকদারের সাথে তাদের নাম এক কাতারে থাকবে, এই ভয়ে। হইতেই পারে এমন।

এটা ঠিক, নিয়া ফেরত দিলে প্রতিষ্ঠানরে বেশী অশ্রদ্ধা প্রদর্শন হয়। শুরুতে বর্জন করলে এত আলোচনার জায়গা থাকত না। তারা হয়ত আরেকজনরে, বা আবার নির্মলেন্দু গুণরেই দিয়া দিত। নিয়া ফেরত দেয়ায় একাডেমীর জন্য বেকায়দা সিচুয়েশন।

জাকির তালুকদারের দিক থেকে সুবিবেচনা প্রসূত ও ভালো সিদ্ধান্ত। দশ বছরে একাডেমীর সম্মান উপভোগ শেষ, ওইটা আসলে ছয়মাস বা বছরেই শেষ হয়ে যাবার কথা। যেমন পাঁচ বছর আগে কে পাইছেন একাডেমী পুরস্কার আপনে মনে করতে পারবেন না। পুরস্কারের ওই উপযোগ শেষ হইয়া গেছে। তালুকদার ফেরত দিয়া নতুন উপযোগ বের করলেন। পাঁচ লিটারি সয়াবিন তেল কিনছিলেন, তেল খাওয়া শেষ, এখন বোতল কাইটা ওইখানে মাটি দিয়া লাগাইলেন ফুলের গাছ, এইটা আরেক ব্যবহার বের করা, ভালো বুদ্ধি।

ফেরতের মাধ্যমে তার সম্মান কিছু বাড়লো। মার্কেটিং এর গিমিক হইল। সাহিত্য সমাজে কিছু বিনোদন-আলাপ আলোচনা হইল। একাডেমীরেও অশ্রদ্ধা করা হইল।

এই পথ ধরে অন্যরাও আসতে পারেন, যেমন কমলালেবু ও সাধুর গল্পের সাথে ওষুধের মত পুরস্কার গিলে ফেলা শাহাদুজ্জামান…

মুরাদুল ইসলাম