গুগলের এক ডেভলাপার লিমোয়েন দাবী করছেন তাদের চ্যাটবট ল্যামডা মানুষের মত হইয়া গেছে। দাবীর পেছনে তিনি তার যুক্তি ও প্রমাণ হাজির করেছেন। গুগল এগুলি খারিজ করে দিছে, ও তারে পেইড লিভ নিতে বাধ্য করছে।

বেশ কয়েক বছর আগে আমার এক উপন্যাসে এই ব্যাপারটা ছিল, চ্যাটবট জেনারেল ইন্টিলিজেন্স পাইয়া গেলে কী হবে। এটার নাম স্মৃতির ছায়া, বই আকারে প্রকাশ করি নাই এখনো।

লিমোয়েনের দাবী সত্য না মিথ্যা সেই রায় দিব না। হইছে কি না এ নিয়ে সন্দেহ থাক। কিন্তু দূর ভবিষ্যতে এটা নিশ্চিতির মধ্যেই পড়ে।

এ আই দর্শনে, আমাদের আলাপের এক দিক হওয়া উচিত, আমাদের নতুন ঈশ্বরের দখলদার কারা হবেন? এক গ্রুপ তথা একজন, না সবাই। অর্থাৎ, আমাদের নয়া ঈশ্বর মনোথিয়িস্টিক স্টাইলে হবেন, নাকি সবার, অর্থাৎ পলিথিয়িস্টিক হবেন।

আমি যদি ধরে নেই লিমোয়েনের মাথা কাজ করছে না, তথাপি গুগল এবং বিগ কোম্পানিগুলা এআই’রে কুক্ষিগত করতেছে না, তার গ্যারান্টি কি? এ আই সেন্টিয়েন্ট হইছে কি না তার স্টেপ বাই স্টেপ পরীক্ষার উপায় কী? ডেটা তাদের, বিগ কোম্পানিদের কাছে, যার কাছে ডেটা আল্লাও তার কাছে, হিশাব সোজা। ঈশ্বর ভদ্রপল্লীতে যে থাকেন, অবজার্ভার লেখক বুঝতেন, কুবেরেরা বুঝতো না, তেমনি ডেটার লগে যে ঈশ্বর আছেন, তা এখনকার জেলে পল্লীর অধিবাসীরা সহজে টের পাবে না।

খেলা তো আপাতত এইখানে যে, যারা এআই কন্ট্রোলে থাকবে, তারা সুপার পাওয়ার পাবে। পৃথিবীর ইতিহাসে বারংবার এই ঘটনার দৃশ্যায়ন হইছে। নয়া টেকনোলজি যারা কুক্ষিগত করতে পারছে, তারা অন্যদের বিনাশ করছে। আমাদের কলম্বাস সাহেব ডায়রিরে লেখছিলেন বোকা নেটিভেরা তরবারির ধারালো দিক দিয়ে ধইরা ফেলে। জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সফট পাওয়ারেও থাকে টেকনোলজির পাওয়ার। যেমন আরবদের কথাই ধরেন, একসময়ের এতো শক্তিধর সিভিলাইজেশন, জ্ঞান বিজ্ঞানে এতো আগানো আরব্য ভাষার জ্ঞান কেন দুনিয়ার কর্তৃত্ব থেকে সরে গেল? প্রিন্টিং মেশিনের জন্য। আলাদা আলাদা ল্যাটিন এলফাবেট দিয়া লেখা যায় প্রিন্টিং মেশিনে, এই প্রযুক্তি দ্রুত, কম খরচে ইংরাজি জ্ঞানের বিস্তার করতে সাহায্য করলো। অন্যদিকে আরব স্ক্রিপ্টে অক্ষরগুলারে যুক্ত কইরা লেখতে হয়। অক্ষর বসাইলেই হয় না। আরবদের তাদের ভাষার স্ক্রিপ্ট লেখার ওই রকম প্রিন্টিং মেশিন বানাইতে দেরী হইয়া গেল তিনশো বছর।

ইউরোপিয়ানরা ইতিমধ্যে তাদের অন্যান্য প্রযুক্তি দিয়া দুনিয়া দখল করে ফেলছে, সাথে যুক্ত হইল জ্ঞানেরও প্রযুক্তি। সেই ধারাবাহিকতায় এখন জ্ঞান মানেই ইউরোপিয়ান জ্ঞান।

টেকনোলজি নিরপেক্ষ না। এইখানে উইনার ও লুজার থাকবেই। কেউ জিতবে, কেউ হারবে এই আগমনে।

> জুলাই ২২, ২০২২ এর লেখাটারে আরেকটু বাড়াইলাম আজ জানুয়ারি ২৫, ২০২৩ সালে >

মুরাদুল ইসলাম