নয়ন বন্ডের মা তো ন্যায়বিচার পাবেন না। নয়ন…

নয়ন বন্ডের মা তো ন্যায়বিচার পাবেন না। নয়ন বন্ড হত্যায় দায়ী কে? রাষ্ট্রীয় বাহিনী তো অবশ্যই, সাথে বরগুনাবাসী ও অনলাইনের উৎসাহী জনতা, যারা নয়ন বন্ডের মৃত্যু চাইছিল। এদের চাওয়া বাহিনীরে সাহস দেয়।

বা ওই বরগুনার ওই ক্রাইম সিন্ডিকেটের কী হইল, যারা ছিল পলিটিক্যাল পাওয়ারের লগে সরাসরি কানেক্টেড? তারা কী তৈরি করে যাচ্ছে আরও এমন এক হত্যাকাণ্ডের পটভূমি?

আর ট্র্যাজিক ব্যাপারটা, তাদেরই গল্প ফিল্মে এসে ব্যবসা করে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, হলে দর্শক ফিরায়ে আনছে।

মানুষের অনুভূতি কি অন্য লেভেলে চলে গেছে? কেউ আর কিছু ফিল করে না সিরিয়াসলি?

নাকি, আসলে এইটাই মানুষের প্রকৃতি, আগেও এইরকম ছিল..

ইতিহাস দেখেন, প্রায় দেড়শো বছর আগে কলকাতার সবচাইতে বড় স্ক্যান্ডাল।

নবীনচন্দ্র নামে এক লোক তার বউ এলোকেশীকে খুন করে। কারণ তার বউ, তার শ্বশুর শ্বাশুড়ির প্ররোচনায় তারকেশ্বরের মোহন্ত মাধবগিরির সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হয়। মোহন্ত প্রথমে মাদক খাইয়ে মেয়েটিকে বশে নেন। নবীন থাকত শহরে, তার বউ থাকত বাপের বাড়িতে।

প্রচুর মানুষ ভীড় করত এই বিচার দেখতে। পত্রিকায় লেখা হতে থাকে নানা কাহিনী।

নবীনচন্দ্র তার বউকে ভালবাসতো, মোহন্তের সাথে সম্পর্ক জানার পরেও সে বউকে ক্ষমা করে তাকে নিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু সম্ভব না হওয়াতেই খুন করেছে। পক্ষান্তরে তার বউ এলোকেশীর ছিল চরিত্র দোষ, ইত্যাদি। ফলে পাবলিকের সিম্প্যাথী ছিল নবীন চন্দ্রের দিকে।

নবীনের যাবজ্জীবন হয়।

মিন্নি রিফাতের ঘটনার সাথে যেন একটা মিল, পরাণ ফিল্মে যে উপস্থাপন, নয়ন বন্ড খারাপ হইতে পারে, খুন করতে পারে রিফাতরে, বাট সে প্রেমিক। যেমন ছিল নবীন চন্দ্র। পাবলিকের সিম্প্যাথী নিয়া নিল নবীনচন্দ্রের মত, এই রোমান বা নয়ন।

অসংখ্য পটে আঁকা ছবি, প্রহসন, নাটক হইছিল তখন এই কাহিনীকে কেন্দ্র করে। কোনটাতে দেখা যায়, মোহন্তের মনোরঞ্জনের জন্য নাচতেছে এলোকেশী। আসলে এলোকেশী কতটা খারাপ ছিল, কতটা ছিল ঘটনার শিকার, সেইসব বিবেচনায় না গিয়ে তারে উপস্থাপন করা হইল এইভাবে যে, সে চরিত্রহীন ও খারাপ।

প্রায় ৩৪ টি বইয়ের কথা জানা যায়, যেগুলা এই কাহিনীকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। সবগুলাই বিক্রিতে জমাইছিল মার্কেট।

নাটক হইছিল প্রায় ১৯ খানা, নাটকও জমাইছিল মার্কেট।

তখন সদ্য প্রতিষ্ঠা হইছে বেঙ্গল থিয়েটার। মঞ্চস্থ হচ্ছে বাংলার জিনিয়াস মধুসূধন দত্তের ক্লাসিক নাটক শর্মিষ্ঠা। কিন্তু লোক দেখতে আসে না। থিয়েটার বন্ধ হবার উপক্রম।

এমন সময় এলোকেশী নবীনচন্দ্র ও মোহন্তের স্ক্যান্ডাল নিয়া নাটক আসে, মোহন্তের এই কি কাজ! থিয়েটার ভরে যায় লোকে। ব্যবসা চলতে থাকে।

মধুসূধন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, অলীক কুনাট্য রঙ্গে , মজে লোক রাঢ়ে ও বঙ্গে।

সময় গেছে, কিন্তু মানুষের আগ্রহের বদল হয় নাই।

একই ঘটনা যেন একটু পরিবর্তীত ভাবে ঘটে চলেছে, সাদা কালো ছিল আগে, এখন রঙ্গিন ভার্শন।

মুরাদুল ইসলাম