দুনিয়ায় মানুষের সাম্রাজ্য চলে ফিকশনের উপরে। ‘সেপিয়েন্স –…

দুনিয়ায় মানুষের সাম্রাজ্য চলে ফিকশনের উপরে। ‘সেপিয়েন্স – এ ব্রিফ হিস্টোরী অব হিউম্যানকাইন্ড’ এর লেখক প্রফেসর ইউবাল নোয়াহ হারারি একটা দারুণ লেখা লিখেছিলেন এটা নিয়ে টেড এ। হোয়াই হিউম্যান্স রান দ্য ওয়ার্ল্ড। ৭০,০০০ বছর আগে এই মানুষেরা ছিল অগুরুত্বপূর্ন প্রাণীবিশেষ। জেলী ফিশের চাইতে তাদের কম ইমপ্যাক্ট ছিল দুনিয়ার উপরে। কিন্তু এই মানুষেরা এখন দুনিয়ার সব কিছুর উপর কর্তৃত্ব করে।

ক্যাম্নে কী? ক্যাম্নে অগুরুত্বপূর্ন এপস থেকে গুরুত্বপূর্ন মানুষ হইয়া গেলাম আমরা?

এটা কী আলাদা পাওয়ারফুল ব্রেনের জন্য? প্রফেসর হারারি বললেন না। মানুষের ব্রেন আর শিম্পাঞ্জির ব্রেনের মধ্যে তফাত বেশি কিছু নাই। মানে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবার মত আলাদা ব্রেন পার্থক্য নাই। সিমিলার ব্রেন। একটা নির্জন দ্বীপে একটা মানুষ আর একটা শিম্পাঞ্জি রাইখা দিলে, শিম্পাঞ্জি বাঁচবে বেশিদিন। তার সারভাইভাল ক্ষমতা বেশি। সুতরাং, ব্রেন বা সারভাইভাল ক্ষমতার গুণে মানুষ গুরুত্বপূর্ন হয় নাই।

তাহলে কারণটা কী আমাদের এই উত্তরণের?

হারিরি বললেন, এটা হল আমাদের একত্রে কাজ করার ক্ষমতার জন্য। পিঁপড়া এবং মৌমাছিরাও একত্রে কাজ করতে পারে। তবে তাদের লিমিটেশন অনেক। তারা নতুন কিছু করতে পারে না একত্রে। একই কাজ করে যায় একত্রে সেই আবহমান কাল ধরে। তারা রানী মৌমাছিরে হত্যা কইরা গণপ্রজাতন্ত্র তৈরী করতে পারে না। সেই ক্ষমতা তাদের নাই।

শিম্পাঞ্জিরা একত্রে কাজ করতে পারে। কিংবা নেকড়ে। তাদের একত্রে কাজের ভিন্নতা আছে। অর্থাৎ অবস্থার সাপেক্ষে ভিন্ন ভিন্ন কাজ তারা একত্রে করতে সক্ষম। কিন্তু তাদের সীমাবদ্ধতা হইল যে তারা অপরিচিতদের সাথে একত্রে কাজ করতে পারে না। একজন শিম্পাঞ্জি তার পরিচিত শিম্পাঞ্জিরেই বিশ্বাস করে এবং তার সাথে একত্রে কাজ করতে পারে।

কিন্তু মানুষেরা সম্পূর্ন অপরিচিত হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষের সাথে একত্রে কাজ করতে সক্ষম। একটা দ্বীপে ১ হাজার মানুষ আর ১ হাজার শিম্পাঞ্জি ছাইড়া দিলে মানুষ জিতবে। কারণ আমরা কো অপারেট করতে পারব। শিম্পাঞ্জিরা সেটা করতে পারে না।
এই কো-অপারেশনের পাওয়ার দিয়া অনেক খারাপ কাজও করছে মানুষেরা। যেমন যুদ্ধ, দাঙ্গা,নির্যাতন ইত্যাদি। মানুষদের ফিকশনে বিশ্বাস করাইতে পারা যায়। এই ফিকশনে বিশ্বাস করে কাজ করে যাওয়া মানুষের ক্ষমতা। যার জন্য সে একত্রে কাজ করতে পারে অপরিচিত হইলেও। যার উপর গড়ে উঠেছে সিভিলাইজেশন। শিম্পাঞ্জিরে আপনি যদি বলেন, শিম্পাঞ্জি আমারে ব্যানানা দেও, এন্ড আফটার লাইফে ইউ উইল গো টু হ্যাভেন। শিম্পাঞ্জি এই ফিকশনে বিশ্বাস করবে না। আপনারে ব্যানানাও দিবে না।

একটা দশ টাকার নোট, একশো টাকার নোট দিলে সেই অনুপাতে পণ্য পাওয়া যাবে এই ফিকশনেও বিশ্বাস করবে না শিম্পাঞ্জি। কিন্তু মানি তে বিশ্বাস করে না এমন মানুষ কী পাওয়া যাবে? যখন অপরিচিত লোকেরা একই ফিকশনে বিশ্বাস করে তখন তারা একই রুল মানতে পারে। দশ টাকার মূল্যমান যদি ১০০০০ হাজার লোক বিশ্বাস করে, তাইলে তারা যতই অপরিচিত হোক দশ টাকার বিনিময়ে দশ টাকার পণ্য দিতে তাদের কোন আপত্তি থাকবে না। কারণ তারা সবে বিশ্বাস করে এই কাগজের মূল্যমান দশ টাকার। টাকা হইল সর্বশ্রেষ্ট ফিকশন যাতে মানুষেরা বিশ্বাস করে।

ফিকশনাল থিওরী, একেকটা দেশের নাম দেয়া হইছে, মানচিত্র আঁকা হইছে এবং সেই নাম শুনলেই দেশটার ছবি ভেসে উঠে। যেমন মানুষের নাম শুনলে উঠে আসে মানুষের মুখ। সবই অবজেক্টিভ। ফিকশনাল গল্প। এই ফিকশনাল গল্পগুলোর উপরে বেইজ করেই গড়ে উঠেছে বর্তমান মানব সভ্যতা।

> ২০১৫

মুরাদুল ইসলাম