মনের পশুরে কুরবানি দেন যে লোকে বলে, এই মনের পশুটা কী?

পশু বলতে যা আমরা বুঝি, এনিমেল, এটা মানুষদের একটা বলার বা দেখার প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে সে অন্যান্য প্রাণীদের একটা ক্যাটাগরিতে ফেলে দিয়া তার আলাদা অস্তিত্বরে অস্বীকার করে। যেমন, কুত্তা, বিলাই, গরু, ছাগল সব পশু, কিন্তু সে পশু না, হয়ে উঠছে মানুষ।

মানুষের মনের যে অহংকার, ঘৃণা ইত্যাদি ইত্যাদি, এইগুলা পাশবিক না, তা মানুষ হইয়া উঠার জন্যই হইছে। এক গরু আরেক গরুরে ঘৃণা করলেও তা কম। মানুষের মত এত গভীর ঘৃণা, তার দ্বারা তাড়িত হয়ে যুদ্ধ বিগ্রহ, কূটনীতি, উঁচু নিচু ভেদাভেদ, ইত্যাদি অন্য প্রাণী করতে পারে না। এইগুলার উৎপত্তি মানুষের ইগোর/আমিত্বের উৎপত্তির সাথে সাথে।

নজরুল গানে বলেন আজ ভুলে যা তর দোস্ত দুশমন হাত মেলাও হাতে। কয়জন এই পরামর্শ শুনে মনে পুষে রাখা ক্ষোভ ঘৃণা ভুলে শত্রুর লগে হাত মিলাইতে পারেন ঈদের দিনে? কেন মানুষ ভুল করলে ঈদের দিনেও ক্ষমা চাইতে পারে না, কেন কেউ ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করতে পারে না?

এইসব জটিলতা পশুদের হয় না। তাদের উন্নত বেরেন ডেভ্লাপ হয় নাই, ইগোও তৈরি হয় নাই।

মনের পশুটা হচ্ছে এই মনের ‘আসল’ মানুষ, ইগো। এনারে কুরবানি দেয়া যায় বছরে দুইবার, এর মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করা। সমস্ত এবাদতের উদ্দেশ্য এইটাই, এনার পঙ্কিলতা সাফ করা। আবার দেখেন, বার বার সুযোগ আসে, তার মানে দৈনন্দিন জীবন যাপনে এনার গায়ে ময়লা ধুলা লাগবেই, এটা স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতা মেনেই তারে সাফ করতে হবে সময়ে সময়ে। দুই ঈদের দিন দুইটা এমনই সুযোগ।

এখন এই প্রশ্নটাও আনেন, তাহলে কি বনের পশু না দিয়ে মনের পশু কুরবানি দিব। এটা গর্দভদের ফলস ডাইকোটমি, অপশন আপনারে কে বলছে এইরকম যে একটা দিলে আরেকটা দেয়া যাবে না? যেকোন সময় ফলস ডাইকোটমি নিয়ে সতর্ক থাকতে পারেন। অপশনগুলা এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন একটা না হইলে আরেকটা, বা এদের বাইরে অপশন নাই। আপনি মেনে নিলেই ভুয়া ফান্দে পড়ে গেলেন। আর চিন্তা করলে দেখবেন, এই অপশনগুলা তো সে বানাইছে তর্কে সুবিধা নিতে, আসলে এইরকম নয় অপশনের প্রকৃতি।

তাই, আপনার মনের পশু বলে পরিচিত মনের “আসল” মানুষরেও সাফ করার কথা ভাবতে পারেন।

মুরাদুল ইসলাম