বিজ্ঞাপনে পাত্রী দেখা

 

বিজ্ঞাপনে আমরা পাত্রী দেখা দেখি মাঝে মাঝে। সম্প্রতি রবির এমন একখানা এড ধরাধামে আসিয়াছেন। সেই এডে পাত্র এবং তার মা বাপ আত্মীয়েরা গেছেন পাত্রীর বাসায়। চা বিস্কুট খাইতেছেন, ঘটক পাখি ভাই বলতেছেন মেয়ের শান্ত শিষ্ট ভদ্র নম্র আচরনের কথা। এমন সময় ঢোল পিটাইয়া রঙ্গমঞ্চে পাত্রীর প্রবেশ। উন্মাদের মত সে “বাংলাদেশ বাংলাদেশ” বলে চিল্লায় খালি। চিল্লানির রেশ কাটতে সময় লাগে। পাত্রের হাতের বিস্কুট ভাইঙ্গা চায়ের কাপে তলাইয়া যায়।

রবি বলে এমন ক্রিকেট উন্মাদনা তারা ছড়াইতেছে। এবং তাদের একটা অফার ঘোষনা করে সম্ভবত।

যাইহোক, সত্যি এইরকম দৃশ্য কল্পনা করেন। পাত্র আর পাত্রের মা বাপের যে মুখভঙ্গী দেখলাম, তাতে মনে হয় না এই বিয়া আর হবে। তারা অবাক হওয়ার ঝাঁকি সামলানির পরেই পাত্রীর বাসা থেকে বিদায় নিবেন।

পাত্রী দেখা আমাদের সমাজের এক প্রথা, এইভাবে গিয়া সুপুত্র এবং কুপুত্রের মা বাপেরা তাদের সন্তানের জন্য রাজকন্যা সন্ধান করেন। এই প্রথার যে স্বাভাবিক নিয়ম, আগে কথাবার্তা শেষ হবে, ছবি টবি ইত্যাদি বা পূর্বপরিচিত থাকলে; শেষে পাত্রের বাসার লোকেরা যাইবেন মেয়ের বাড়িতে। এবং এরপরে বিয়ার কথাবার্তা আগাবে। ভালোই।

কিন্তু এই রকম হয় না। আমি এক লোককে সম্প্রতি দেখেছি, মনে হয় পনের বিশ জায়গায় কন্যা দেখতে গেছে। তার চয়েজ হয় নাই। ফ্যামিলির হইলে তার হয় না। একবার ভেবে দেখেন, একটা মেয়েরে পুত্রের লোকেরা দেখতে আইল এবং সুন্দর না এই কারণে চলে গেলো; সেই মেয়েটার মনের অবস্থা ভাবেন! এটা অপমানজনক। আমি মনে করি এটা আমাদের সমাজের এক বড় সমস্যা। আমাদের তীব্র পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব যেইটা আছে সমাজে, তার জন্যই এমন অবস্থা তৈরী হয়।

পাত্রী দেখার যে সংস্কৃতি বা প্রথা, যাই বলেন, এর ঘৃণ্য মিসইউজ এরে জঘন্য কইরা তুলছে। এটারে ফান, মজা হিশাবে উপস্থাপন যে বিজ্ঞাপনে হয়, তা ভালো নয়। এই প্রথা থেকে আমাদের উঠে আসতে হবে। এমন ব্যবস্থায় যাইতে হবে যেন এইরকম মিসিউজের সুযোগ আর না থাকে।

বিজ্ঞাপনে পাত্র দেখার বিষয় মনে হয় থাকে না। আমার চোখে পড়ে নাই সম্ভবত। একটা এড দেখছিলাম, এক লোকের মাইয়া ইয়ো ইয়ো কিড এক পোলারে বিয়া কইরা আনে আর বাপরে বলে ও সুন্দর না? বাপ অবাক হইতে হইতে অজ্ঞান হইয়া যান। এইটাও সম্ভবত কোন ফোনের এড। কিন্তু এখানে দেখেন কুপাত্ররে কীভাবে উপস্থাপন করা হইছে। কুপাত্রের সাথে উনার মেয়ের বিয়া কিন্তু হইয়াই গেছে। বিয়া হইবার আগে ভাঙ্গাভাঙ্গির আর চান্স রইল না। কুপাত্র হাসিমুখে খাড়ায় আর মাইয়ার বাপ হিশাবে বুড়া ভদ্রলোকের অজ্ঞান হইতে হয়। মাইয়া আর মাইয়ার বাপ যখন আপনে, ভোক্তভোগী আপনারেই হইতে হবে; এমন হিশাবের উপস্থাপন। হয়ত এইটা সমাজ বাস্তবতা, কিন্তু এগুলা চেঞ্জ করতে হবে। এদের নিয়া ফাইজলামি, মজাদার কইরা উপস্থাপন, এদের আরো সংহত করে বলেই মনে হয়।

২২ অক্টোবর, ২০১৬

মুরাদুল ইসলাম