আমাদের মনে ছোটকাল থেকে একটা বাজে রিলেশনশীপ আইডিয়া…

আমাদের মনে ছোটকাল থেকে একটা বাজে রিলেশনশীপ আইডিয়া ঢুকাইয়া দেয় সমাজ ও মিডিয়া। সেটা হলো প্রেম সম্পর্কিত ও গুড কাপল সম্পর্কিত।

রাজার মাইয়া আর অচিন দেশের রাজপুত্র বিয়া করে। অনেক ঝামেলা হয়, এরপর তারা একসাথে মিলে সুখে শান্তিতে বাস করে। নিউমেরাস টাইম, আমরা এই একই প্যাটার্নের গল্প দেখতে থাকি। ফিল্মে, বইয়ে।

আমি ঐসময়েই মাঝে মাঝে এন্ডিং এর পরে কী হবে ভাবতাম। তখন ভাবতে গিয়া পাইলাম যে প্যাটার্ন একটা আছে। নায়ক নায়িকা অবিবাহীত থাকলে তাদের প্রেম বিয়া ও গুড কাপলে শেষ হয় সাধারণত। আর তাদের বিয়া শুরুতেই হইয়া গেলে ঝামেলা হয় বিয়াতেই, ঘর ভাঙ্গা ঝড় আসেন, ঘর ভাঙে, আর পরে বুড়া বয়েসে আবার তারা মিলিত হন, সকল ভুল বুঝাবুঝির হয় অবসান। ইন্টারেস্টিংলি এইখানে দোষ থাকে থার্ড পার্টির।

নাটক, ফিল্ম রূপকথার গল্পের রিলেশন ও গুড কাপলের বাস্তব উপস্থাপন কম মিলে। কিন্তু এর প্রতি মানুষের এক আকাঙ্খা গইড়া উঠে। মানুষ অভিযোগ করে পর্নো ইন্ডাস্ট্রি সেক্স সম্পর্কিত ভুল ধারণা প্রচার করে মানুষের ক্ষতি করে, ভুল এক্সপেকটেশন ঢুকাইয়া দেয়, ভুল ধারণা ও চাহিদা তৈয়ার করে। কিন্তু মিডিয়া ও ফিল্ম একইভাবে যে মানুষের রোমান্টিক লাইফ নিয়া ভুল ধারণা প্রচার করে, বিভ্রান্ত ও ক্ষতি করে, সেইটা নিয়া কারো তেমন আপত্তি দেখা যায় না।

তাহসান ও তার এক্স ওয়াইফের ক্ষেত্রে যা হইছে, তারা দুইজনই সুদর্শন, তাদের সম্পর্ক ভাল দেখা যাইত, যেহেতু মিডিয়া এইসব পারফর্মিং আর্টিস্টদের খবর নিয়মিত প্রচার করে যায়। সুতরাং, পাবলিক তাদের সেই রূপকথার গুড কাপলের স্তরে বসাইয়াই দেখছে।

ফলে, এইটা এক ধাক্কা ছিল তাদের জন্য যখন ভাঙে বিয়া। কারণ এই বাস্তবতা অস্বস্থিকর হইয়া উঠে। যেন রূপকথার গল্পে, রাজকন্যারে দানবের দূর্গ থেকে বাঁচাইয়া আনল রাজপুত্র, আর তাদের বিয়া হইল, কিন্তু পরে দেখা গেল রাজপুত্রের বিয়াতে মন নাই, আর রাজকন্যা ভুগতেছে দানবের প্রতি সিম্পেথিযুক্ত ভালোবাসায়, বা স্টকহোম সিন্ড্রোমে।

মানুষের যে অবাস্তব ও কাল্পনিক রোমান্টিক আকাঙ্খাজনিত ওয়ার্ল্ডভিউ, এতে তার নিজেরই ক্ষতি হয় বেশি। কারণ লাইফ হইল হবসিয়ান, ন্যাস্টি শর্ট এন্ড ব্রুটিশ। ফলে পূর্ণতার আকাঙ্খাই সকল অসুখের কারণ।

জাপানিজ জেন ফিলোসফিতে ওয়াবি সাবি বলে একটা কনসেপ্ট আছে। খুবই পাওয়ারফুল। এর মূল জিনিস অপূর্ণতারে গ্রহণ করা। অপূর্ণতার সৌন্দর্য উপভোগ করতে শেখা। কারন পূর্ণতা নাই, ও এর আকাঙ্খা পেইনফুল।

ওয়াবি সাবিতে, ধরেন একটা কাপ আছে। এই কাপরে মেঝেতে ফেলে ভাঙা হলো। এরপর ভাঙা টুকরাগুলি জোড়া দেয়া হলো। এই ভাঙার দাগ থাকবে। এটারেই বিউটি গণ্য করা হয়।

আমার ধারনা এটা সার্ত্রে বর্ণিত, জীবনরে কাল্পনিক গল্পে না রেখে অগল্পের বাস্তবতায় ফিরে আসা।

আমাদের সমাজে উলটা জিনিস দেখা যায়। চায়ের কাপ ভাঙা হইলে তাতে কেউ খাইতে চায় না। এতে নাকি হায়াত কমে! এইভাবে স্তরে স্তরে বিদ্যমান এক পূর্ণতার আকাঙ্খা।

যেন, সে, ফিউচারে পাবে রাজকন্যারে, আর ওই রাজকন্যা বা ভদ্র মেয়ে খুবই ভালো। সে খুবই বুঝদার, রাগ করে না, সাইকোলোজিক্যালি ম্যানিপুলেট বা পাওয়ার প্লের প্রশ্নই আসে না। সো ব্রাদার, শুভকামনা আপনাদের জন্য। আর অপরদিকে মাইয়ারা ভাবে তারা পাবে রাজপুত্রের মত ছেলে, যে শাহরুখ খান অভিনীত ক্যারেক্টারগুলির মত রোমান্টিক, আর ভালো, আর ইন এভ্রি ওয়ে ভেরি গুড। এইসব সিসটার্স, শুভকামনা থাকলো, যদিও আপনারা উভয়েই দেখবেন একজন হিউম্যান আসলে সস্তা পপুলিস্ট সাহিত্য বা ফিল্মের মত এক রৈখিক না, অনেক জটিল। ইভেন, ঐ মানুষটারই হয়ত কোন ক্লু নাই সে কী, নিজে কোন মাপের চুদির ভাই বা আপু, সে সম্পর্কে।

তাহসান ও তার এক্স ওয়াইফ, মিডিয়ায় তাদের উপস্থাপন, এগুলা যে সরল রৈখিক গল্প আপনাদের দিছে, ইট ইজ নট ট্রু রিয়ালিটি। আর আপনারা মানুষেরা, সেই গল্পের উপর ভর কইরা তাদের যে গুড কাপলের ছবি আঁকছেন নিজেদের জীবন ও সম্পর্ক সম্পর্কিত বুঝাবুঝি দিয়া, তা অধিকাংশই কল্পনা।

পরে যে গল্পগুলি আসল সামনে তাদের আরো সম্পর্ক নিয়া, এগুলা রিয়ালিটি। ওয়াবি সাবি দিয়া ভাবলে, আপনাদের গুড কাপল নামের চায়ের কাপের ভাইঙ্গা যাওয়া দেখা গেল। আসলে হয়ত ভাঙ্গাই ছিল। এটারেই গ্রহণ করতে হবে এই সত্য সহ যে, মানুষ হিসেবে আপনার লাইফও ভাঙ্গা কাপ জোড়া দেয়া। এটা দোষের কিছু না, এতেই বিউটি।

মুরাদুল ইসলাম