ইউরোপের কিছু দেশে মুখ ঢাকা বোরকার বিরুদ্ধে শক্ত…

ইউরোপের কিছু দেশে মুখ ঢাকা বোরকার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান আছে। এটি বর্তমান সময়ের বাস্তবতা।

ফ্রান্সে বোরকা ব্যানের পরে, এর পক্ষের যুক্তি ছিল, বোরকা পরাদের মুখ দেখা যায় না। এটা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। মানুষের অধিকার আছে সে কার সাথে কথা বলছে, তারে দেখার।

বিপক্ষে যুক্তি ছিল, একজন মানুষ কী পরবে না পরবে এটা তার অধিকার। তার পোশাকের বিরুদ্ধে আইন করা মানুষ হিশাবে তার অধিকার ও মর্যাদার উপরে আঘাত। বোরকা অপরাধ বাড়ায় এটা খোঁড়া যুক্তি, কারণ অপরাধ করে পালানোর মত পোষাক এটা না। এবং বড় সানগ্লাসের মত পরিধেয়ও মুখের অনেকাংশ ঢেকে রাখে।

বাংলাদেশর ক্রিকেটার মোস্তাফিজুর রহমান এইবারের (২০২২) রোজার ঈদে তার বউসহ এক যৌথ ছবি আপলোড করেছেন টুইটারে। ছবিতে বউয়ের মুখ ঢাকা। এটা নিয়ে হাসাহাসি করছেন তার কিছু ফ্যান।

বাংলাদেশের প্রভাবশালী পত্রিকা প্রথম আলো তাদের ফিচার ছবির শিরোনাম দিয়েছে, ‘মোস্তাফিজের পাশে কে?’

এই প্রশ্ন অবশ্যই ভুল ও সঠিক উত্তরের প্রবাবিলিটি তৈরি করে। এবং প্রতিটা ভুল উত্তর মোস্তাফিজ ও তার বউরে অপমান করা হয়। প্রথম আলো এই উদ্যোগ নিল।

মোস্তাফিজ বউয়ের মুখ ঢাকা ছবি দিছেন তাই, কেন এই মক এবং অপমান? পরোক্ষ বিরোধিতা?

কেউ তার ইচ্ছামত কাপড় পরে ছবি দিলে, একটা জাতীয় পত্রিকা এইভাবে মক করতে পারে কি? ধরা যাক বউয়ের বিকিনি পরা ছবি দিল কোন ক্রিকেটার, সেক্ষেত্রে মৌলবাদী পত্রিকা মক করলে, তা একইধরনের কাজ হয় কি না? পোশাক পরার অধিকাররে মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার অংশ মেনে নিলে।

এই মকারির সমস্যার বাইরেও প্রথম আলো যে প্রশ্নটা করেছে, এর সাইকোএনালিসিস করলে, সেই জিনিশই মিলবে যা স্ল্যাভো জিজেক বলেছিলেন কেন অনেক পশ্চিমারা মুখ ঢাকা বোরকাকে ভয় পায়।

জিজেক থেকে, “the flat, smooth expanse of darkness with only a slit for eyes resembles and elicits the same response as a face with its skin peeled off; without the mask of the face, we are directly confronted with the ‘abyss of the Other-Thing.”

বোরকার ভেতরে আছে একটা গেইজ, যা দেখছে। কিন্তু আপনে তারে দেখতে পান না।

প্রথম আলোর মত প্রশ্ন ও ফ্রয়েডিয়ান আনক্যানির ভয় আসে যে, এর ভেতরে কে?

জিজেকের ফ্রয়েডিয়ান সাইকএনালিসিস, মুখ ঢাকা বোরকা মাস্ক না, বরং মানুষের মুখটাই মাস্ক যা ভেতরের শূন্যতা বা “আদারের এবিস” (টেরিফাইং আদার যারে আমরা চিনি না, যে কি চায় আমরা জানি না" স্মরণ করুন ডেভিড লিঞ্চের লস্ট হাইওয়ে ফিল্মের মিস্ট্রি ম্যানরে) ঢেকে রাখে ও একটা ফ্রেন্ডলি মানুষ অবস্থা তৈরি করে। বোরকার কারণে এই মাস্ক চলে যায়। তখন মানুষ মনে করতে থাকে, ওই শূন্যতাটাই আছে, যারেই তার আজন্ম ভয়, যেটা তার সকল ব্যাখ্যাতিত ভয়ের কেন্দ্রবিন্দু।

প্রথম আলোর প্রশ্নের উত্তর, এটাই। মোস্তাফিজের পাশে, ‘এবিস অব আদার’ রয়েছে, যা তোমারে দেখতেছে, এই দেখা তোমার ভেতরে যে অসচেতন ভয় তৈরি করেছে, সেটাই মকারি আকারে বের হয়েছে জিজ্ঞাসায়। জিজ্ঞাসাটি তোমার এক পরোক্ষ বিরোধিতা, তুমি এই রূপ দেখতে চাও না। মানুষের নগ্ন শূন্যতা। তুমি চাও সে তার চেহারার মাস্কে ফিরে আসুক।

মুরাদুল ইসলাম