এটা প্রায়ই দেখা যায়। কোন একজন লোক আমেরিকায়…

এটা প্রায়ই দেখা যায়। কোন একজন লোক আমেরিকায় বা ইউরোপে শিক্ষিত, বড় চাকরি করতেন আর বাংলাদেশে চলে আসছেন। এই জিনিসটা ঐ ব্যক্তিরাও বলেন দেশে কাজ করতে গিয়া খারাপ ঝামেলায় পড়লে, আবার ওই লোকের পক্ষে থাকা দেশী লোকেরা আরো নিয়মিত বলে থাকেন। যেমন লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে হয়। বিবিসির স্বাক্ষাতকারে দেখলাম পলিটিশিয়ান রেজা কিবরিয়ারেও এটা বলা হইল, বিদেশে আরামের জিন্দেগী ছেড়ে কেন আসছেন, তিনিও তার উত্তর দিলেন। অর্থাৎ, এই ন্যারেটিভটা বেশ ডমিন্যান্ট, ও যারা বলেন ও যাদের বলা হয়, দেখা যায় উভয়েই ন্যারেটিভটা মাইনা নেন।

এই ন্যারেটিভ, ইউরোপ আমেরিকায় আরামের জিন্দেগী ফেলে তিনি চলে আসছেন, আমি এটারে ভুল মনে করি।

কারণ, যে ব্যক্তি ওইরূপ শিক্ষিত তার টাকা পয়সার চিন্তা নাই। এবং হায়ারার্কি অব নিডে, সে নিচের স্তরে থাইকা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান নিয়ে ভাবিত নয়, যেইটার হিসাবে আপনারা আরামের জিন্দেগী মাপেন। তার নিড হইল, মিনিং, সম্মান, শ্রদ্ধাপ্রাপ্তি, স্বীকৃতির। এবং নিজের দেশেই এসব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

অন্য দেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের রেসিজম থাকে, বৈষম্য থাকে, এটা একটা দিক। না থাকলেও যে ইনফ্লুয়েন্স দেশের লোকদের করা সম্ভব, এটা ঐ দেশে করা একই ক্ষমতা দিয়ে অনেক কঠিন। যেমন জাফর ইকবাল যদি রিসার্চার হইতেন আমেরিকায়, তারে কয়টা লোক চিনতো ওই দেশের? অনেক বিজ্ঞানীও আছেন আমেরিকায়, বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্ট, তাদের কয়জনের খবর ওই দেশের লোক জানেন বা কয়জন বাংলাদেশের লোক জানেন? বা রেজা এইখানে পলিটিশিয়ান হিশাবে যে সুযোগ, সম্মান ও সমর্থন তার বাপের পলিটিক্যাল কেরিয়ারের জন্যই পাবেন, সেটা আমেরিকায় রাজনীতি করলে তার মিলতো? সম্ভাব্যতার হিশাবে ধরলেও, আমেরিকায় তিনি সংসদে যাইতে পারতেন ধরা যাক, কিন্তু বাংলাদেশে তার সম্ভাব্যতা প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

টাকার চাইতে ক্ষমতা অনেক বড় জিনিস। বাংলাদেশে টাকা কম যদিও পান, এখানে খরচও কম, তথাপি এখানে ক্ষমতা থাকবে বেশি তার।

এছাড়া, ঐ লেভেলের শিক্ষিত, স্কিলড, আমেরিকায় কাজ করা লোক দেশে আসলে বড় বেতনেই কাজ করবেন। ঢাকায় ভালো জায়গায় থাকবেন। যেসব এলাকার সাথে বিদেশের পার্থক্য কম, আরাম আয়েশের দিক থেকেও পার্থক্য বেশি না। বরং এখানে সাইকোলজিক্যাল আনন্দ বেশি। আমেরিকা ইউরোপে প্রায় সবাই এই বেসিক আরাম আয়েশে থাকে, আর বাংলাদেশে তিনি থাকতেছেন, বেশিরভাগেই থাকতেছে না।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ গরীব এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য এদেশে ধনী ও সুপার ধনীরা আছেন। তারা বিদেশের চাইতে আরামে বাস করেন। বেক্সিমকো গ্রুপ মাস্ক বানানোর ফ্যাক্টরি দিবে আমেরিকায়, ডিট্রয়েটে, ইনভেস্ট করতেছে ৩০ মিলিয়ন ডলার।

আবার, সুবিধার দিক থেকে, নিজের দেশ, পরিচিত পরিবেশ, ভাষা, মানুষ, বাতাস, কালচার, খাবার, এগুলির মূল্য অনেক। কেউ এদের বেশি ভ্যালু দিতে পারে বেসিক আরাম আয়েশের টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবার পরে। তার কাছে এটা বেশি সুখকর মনে হতে পারে।

আর, রিস্ক এখানে কম। আমেরিকায় তার নেটওয়ার্ক ভাল, যেহেতু বড় চাকরি করছেন, দীর্ঘদিন ছিলেন, পড়ালেখা করছেন। ফলে দেশে ক্লিক না করলে তিনি ব্যাকও করতে পারবেন।

ফলে আরামের জীবন ফেলে তিনি অজ পাড়া গায়ে আসছেন, বিপন্নদের উদ্ধার করতে তার এই মহান আত্মত্যাগ, এমন ভেবে তার ত্যাগী সন্ন্যাসী বানালে হবে না। কারণ তিনি তা নন। তিনি সুখের জন্যই আসছেন, কেবল নিড অব হায়ারার্কিতে নিচের স্তরে থেকে আপনি সুখরে বিচার করতেছেন তাই তার সুখটা ধরতে পারেন না।

মুরাদুল ইসলাম