কাঁটাতারের বেড়ার সিগনিফিকেন্স কী?

ইন্ডিয়া বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মান করছে। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের পুরো সীমান্তে বেড়া নির্মান ভারতের প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয়।

এই বেড়ার দুইটি মারাত্মক সিগনিফিকেন্স রয়েছে, যার কোনটাই সীমান্ত চোরাচালান কিংবা বাংলাদেশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ নয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির হিশাব দেখলেই ধারনা করা যায় সীমান্তে চোরাচালান ঠেকানো বেড়ার উদ্দেশ্য নয়।

২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৬৭২.৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়েছে ৬.১৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য।

এই বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির তুলনায় সীমান্তে চোরাচালান অতি অল্প, এবং এতে বাংলাদেশও ভোক্তভোগী।

সীমান্ত দিয়ে অবৈধ বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশের যে দোহাই ইন্ডিয়া থেকে শোনা যায়, তা সর্বাংশে সত্য নয়। এই অনুপ্রবেশের ঘটনার সাথে এও হিসাবে নিতে হবে বাংলাদেশ থেকে অনেক হিন্দু সম্পদশালী পরিবারও ভারতে এইভাবে চলে যাচ্ছে, এবং এতে বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছে। আর কাঁটাতার দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ কখনো ঠেকানো যায় না।

ইন্ডিয়ায়, বিশেষত নর্থ ইস্টের আসামে বাংলাদেশ বিরোধী জনমত অনেক শক্ত। এটি ইন্ডিয়ার জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলি গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। ফলে এই কাঁটাতার নির্মান একটি জাতীয়তাবাদী প্রকল্প, জাতীয়তাবাদকে যা শক্ত করে। এটি কাঁটাতারের প্রধান সিগনিফিকেন্স, যদিও প্রায় আধ্যাত্মিক। যেমন ছিল ট্রাম্পের গ্রেট ওয়ালের সিগ্নিফিকেন্স। তিনি যদিও নির্মান করতে পারেন নি, তবে কথাতেই কাজ হয়েছে। তার গ্রেট ওয়াল এখনো অদৃশ্য, কিন্তু জাতীয়তাবাদী কর্তব্যটি পালন করে গেছে ও যাচ্ছে অদৃশ্যে থেকেই। যেরকম অদৃশ্যে থেকেই কাজ করে যায় মতাদর্শগুলি।

দ্বিতীয় সিগনিফিকেন্স হলো ভবিষ্যতের ও রিয়ালিস্ট। ক্লাইমেট চেইঞ্জের কারণে বাংলাদেশের পাঁচ ভাগের এক ভাগ প্রায় একশো বছরের কম সময়ের মধ্যে ডুবে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাড়াতাড়ি বা বেশি সময়ে ডুবে যাবেই এটা নিশ্চিত প্রায়, যদি অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন না আসে ক্লাইমেট চেইঞ্জ মোকাবেলায়। এই অবস্থায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ইন্ডিয়ায় আশ্রয় নিবে। সেই ভবিষ্যৎ দূর্যোগ এর কথা স্মরণ রেখেই ইন্ডিয়া আগে ভাগে কাঁটাতারের বেড়া নির্মান করে রাখছে।

মুরাদুল ইসলাম