নেলসন ম্যান্ডেলা বিষয়ে

নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন আজ। হোমপেইজে অনেক পোস্ট দেখছি। এইসব লোকেরা যদি আসলেই ম্যান্ডেলা সম্পর্কে জানেন, তাহলে তো ব্যাপারটা গ্রেট আমাদের দেশের জন্য।

ম্যান্ডেলারে লিডার হিসেবে আমি এক এ রাখি। দেরিদা পর্যন্ত তার লিডারশিপ নিয়ে ভাল মন্তব্য করেছেন। কিন্তু, এখানে আরেকটা কথাও আসে, হয়ত বড় বিশ্ব শক্তি চাইছিল এমন, তাই ম্যান্ডেলা করতে পারছেন। একটা শান্তিপূর্ন সমাধান।

যাই হোক, ম্যান্ডেলা আসলে দুইজন। জেলে যাবার আগে বিদ্রোহী, প্রতিবাদী যুবক। আর দীর্ঘদিন জেল খাটার পর বের হয়ে আসা ম্যাকায়াভেলিয়ান, শান্ত, ধীর নেলসন ম্যান্ডেলা। ম্যাকায়াভেলিয়ান পজেটিভ অর্থে ব্যবহার করলাম।

আহমদ শরীফের কথা পড়ে আমি একসময় বুঝছিলাম সাহসীরা কীভাবে কাজ করে। তারা হয় অবিমিষ্যকারী। অর্থাৎ, অগ্র পশ্চাত অত বিবেচনা করে না। আর এর অনেক পরে ম্যান্ডেলা পড়ে জানতে পারি সাহস আসলে কী।

একবার ম্যান্ডেলা হেলিকপ্টারে যাচ্ছেন কোথাও। উঠার পরেই তিনি বুঝতে পারলেন যানে সমস্যা হচ্ছে। আসলে পাখায় না এঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। ম্যান্ডেলার গার্ড তারে জানাইল বিষয়টা। আর এদিকে চালকেরা তার বায়োগ্রাফাররে জানাইলেও তারে জানায় নাই। বায়োগ্রাফার ম্যান্ডেলার পাশে বসে ছিলেন। তিনি দেখলেন ম্যান্ডেলা এক মনে পত্রিকা পড়ছেন।

হেলিকপ্টার ভাগ্যগুণে ভালো ভাবেই ল্যান্ড করল। ঠিক ঠাক অবতরনের পরে ম্যান্ডেলা পাশে থাকা বায়োগ্রাফাররে বললেন, আইজ যে ভয় পাইছিলাম। আরেকটু হইলেই ত গেছিলাম মিয়া!

বায়োগ্রাফার তখন অবাক হন। এই লোক এতক্ষণ কীভাবে উদাসীন হয়ে ছিল!

সাহস মানে ভয়ের অনুপস্থিতি না। সাহসীরাও ভয় পায়, কিন্তু নিজেরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ম্যান্ডেলা এই শিক্ষাও অর্জন করেছিলেন জেল জীবন থেকে। জেল জীবনে একবার তিনি এক বড় সিদ্ধান্ত নেন সহনেতাদের সাথে আলোচনা না করে, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে। এই সিদ্ধান্ত যদি কাজ না করত তাহলে তিনি আজ বিশ্বাসঘাতক রূপে পরিচিত হতেন। ভাগ্যও কাজ করেছে এখানে। ঠিক সেই সময়েই কালোদের জনপ্রিয় হতে থাকা র‍্যাডিক্যাল এক তরুণ নেতা মারা যায়।

ম্যান্ডেলার মুখের যে হাসি দেখেন, তা তিনি আয়নায় কসরৎ করে করে শিখেছিলেন। সবাইকে দেখলেই এই হাসি দিতেন। ভালো পোষাক পরে থাকার এবং হাসির প্রভাব ইত্যাদি ম্যাকায়াভেলির দ্য প্রিন্স পড়া ম্যান্ডেলার জানা ছিল। এগুলো কাজে লাগিয়েছিলেন মাদিবা।

জুলাই ১৮, ২০১৮

মুরাদুল ইসলাম