রাজা সুলেমানের স্বপ্ন নিয়া আবার আলাপ করা যায়।…

রাজা সুলেমানের স্বপ্ন নিয়া আবার আলাপ করা যায়। সুলেমান স্বপ্নে দেখলেন, ঈশ্বর বলতেছেন ও সুলাইমান, তোমার কী চাওয়ার আছে, চাও আমার কাছে।

সুলেমান বললেন, ঈশ্বর আপনে আমার বাপ ও আমার উপর প্রচুর দয়া দেখাইছেন। আপনার গ্রেট মানুষদের শাসন করতে দিছেন আমারে, এটা বড় দায়িত্ব। আমারে ভালো মন্দ আলাদা করার ও সঠিক বিচারের প্রজ্ঞা দেন।

গড খুশি হইলেন। 

বললেন, তুমি ক্ষমতা চাও নাই, সম্পদ চাও নাই, শত্রুর বিনাশ চাও নাই, চাইছো প্রজ্ঞা। বড় খুশি হইলাম, যা চাইলা তুমি তা দিলাম তোমারে, প্রজ্ঞায় তোমার ধারেকাছেও কেউ আসবে না। সাথে যা চাও নাই তাও দিলাম। ধনে মানে সম্পদে তোমার মত আর কোন রাজা হবে না।

এই স্বপ্নের আয়রনি হইল, রাজা সুলেমান আগে থেকে প্রজ্ঞাবান না হইলে এমন জিনিশ চাইতেই পারতেন না। 

যদি প্রজ্ঞাবান না হইতেন তাইলে তো তিনি অন্য রাজাদের মত ধনসম্পত্তি বা অমরত্ব চাইতেন। স্মরণ করা যায়, মহাভারতে, যুধিষ্ঠির নিছিলেন কেশব, দূর্যোধন নিছিলেন বিপরীতে লক্ষ নারায়ণী সেনা।

সলোমন এমন জিনিশ চাইলেন, যেটা পাইলে ধন সম্পদ বা খ্যাতির মাধ্যমে অমরত্ব সকলই সম্ভব হয়।

আবার, প্রজ্ঞাবান সলোমনের এটাও বুঝার কথা যে, কী চাইলে গড খুশি হবেন।

সুতরাং, স্বপ্নে চাওয়ার পরে গড সলোমনরে যে প্রজ্ঞা দিলেন, তার আগে থেকেই সলোমন প্রজ্ঞাবান।

আসলে, এইখানে কিং সুলেমান কোন স্বপ্নই দেখেন নাই। বা যা দেখছেন তা ভুলে গেছেন বা বলেন নাই। 

তিনি এই স্বপ্নের কথা বলছেন অন্য এক উদ্দেশ্যে। 

তিনি তখন অলরেডি শক্তিশালী কিং।  তা না হলে ফারাও রাজার সাথে সম্পর্ক করতে পারতেন না তার মেয়েরে বিয়ে করে।

সমস্যা যেটা ছিল, বিভিন্ন পবিত্র জায়গায় স্যাক্রিফাইস হইত তখন। কারণ গডের নামে একক কোন টেম্পল নির্মান শেষ হয় নাই বা চালু হয় নাই। সুলেমান বুঝতে পারছিলেন ক্ষমতা সুসংহত করতে জেরুজালেমের টেম্পলরেই মূল কেন্দ্র বানাতে হবে। এই স্বপ্ন সুলেমান দেখেন গিবনে। ওইখানে গেছিলেনই তিনি স্যাক্রিফাইস করতে।

কিন্তু স্বপ্ন দেখার পরদিন, তিনি স্যাক্রিফাইস না করেই জেরুজালেমে ফিরে আসেন। সেখানে গডের উদ্দেশ্যে স্যাক্রিফাইস করেন, ফিস্ট দেন।

এরপরেই কাকতালীয় ভাবে ওই দুই মহিলা আসে বাচ্চা নিয়ে। তিনি বিচার করেন, তার প্রজ্ঞা দেখান। এই মহিলা দুইজন ছিল প্রস্টিটিউট, এটা খুব অসম্ভব না যে, বিচারটা স্টেইজড ছিল। 

পুরা ব্যাপারটা করা হইছিল, জেরুজালেমের টেম্পলেই স্যাক্রিফাইস চালু করতে। ক্ষমতার সাথে সাথে সুলেমানের সবাইরে দেখানো দরকার ছিল যে জ্ঞানে প্রজ্ঞায় তিনি শাসক হবার যোগ্য। এই কারণে তিনি স্বপ্নটার কথা বলেন এবং পরবর্তীতে বিচারের নাটক হয়।

কিং সুলেমন যে উইজডম পাইছেন, ভালো মন্দ আলাদা করার ক্ষমতা পাইছেন ওই স্বপ্নের মারফতে, তার প্রমাণ পরবর্তীতে তিনি দেন নাই বাইবেলে, গড তারে যা করতে মানা করছিলেন, বাইরের রাজ্যে ভিন্ন ধর্মে বিয়া না করা, সুলেমান এগুলি করেন, এমনকী বউদের খুশি করতে ঐসব মন্দিরও বানান, তো যেই প্রজ্ঞা তিনি স্বপ্নে পাইলেন তা আর থাকল কোথায়! মূলত, স্বপ্নটা প্রজ্ঞার কিছুই না, ছিল ক্ষমতার, কিং সুলেমান মূল টেম্পল জেরুজালেমে আনতেই এটা করেন। 

স্বপ্ন যখন কেউ বলে, তখন সে হয় মিথ্যা বলে বা ভুলে যায়। এই স্বপ্ন বলার মাধ্যমে তার অন্য উদ্দেশ্য সাধন করতে চায়। ফ্রয়েডরে যেইভাবে তার পেশেন্টেরা ভুল স্বপ্ন বলত বানাইয়া বানাইয়া। কারণ তারা হয়ত চাইত ওই ব্যাখ্যা, যা তার উদ্দেশ্যের সাথে এলাইন করে অথবা চাইত তাদের দুরাবস্থার এক কালপ্রিট বের করতে, নিজেরা দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেতে। 

মুরাদুল ইসলাম