ধনী হওয়ার দর্শন -১

আমি বা আমরা ধনী হইতে চাই, এটা নিছক কোন কথা নয়; দার্শনিক এবং রাজনৈতিক অবস্থান।

 

১।

খালি গরীবের ঘোড়ারোগ হয়, ধনীর ক্ষেত্রে ঘোড়ারোগেরই অস্তিত্ব নাই। যা গরীবের জন্য ঘোড়ারোগ, ধনীর জন্য তা হালকা হাঁচি। অতএব, ঘোড়ারোগ থেকে বাঁচতে আমাদের ধনী হতে হবে।

 

২।

ধনী হইবেন কীভাবে? চিন্তা করতে হবে আসলেই। এই দেশে কীভাবে ধনী হওয়া যায়? দেশে যে হারে কর্মক্ষম বেকার জনশক্তি বাড়তেছে তাতে মনে হয় না চাকরি বাকরি করে ধনী হওয়া সম্ভব।

 

৩।

ধনী হবার প্রকৃত উপায় ব্যবসা। অথবা ধনী দেশে চইলা যান। স্কিল মাইগ্রেশন বা ধনী দেশী মাইয়া বিয়া কইরা যাইবেন বা অন্য কোনভাবে।

 

৪।

কিন্তু ধনী দেশে গেলেই যদি ধনী হইতে পারবেন তা বলা যায় না। ধনী হওয়া বা ধন অর্জন একটা শিল্প হিসেবে দেখেন। আর সব শিল্পেই বেশি মানুষ ব্যর্থ হয়।

 

৫।

লোকে বলবে, ধনে কি সুখ দিবে? তাদের কথায় কান দিয়েন না। ধনহীন হইলেই আপনার বাসা বাড়ি সুখের ফ্যাক্টরি হইয়া যাবে, তা না। সুখ ভিন্ন জিনিস, তা ধন বা ধনহীন অবস্থার উপর নির্ভর করে না।

 

৬।

ধনীদের মুখের দিকে তাকাইয়া দেইখেন। তারা কি সুখি সুখি চেহারার হয়। আর গরীবেরা গরীব গরীব, ক্ষেত্রবিশেষে দুখী দুখী চেহারার দেখা যায়। এর কারণ ধনীরা তাদের দামী গাড়ির কাচ এবং মুখে নানাবিদ ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার কইরা দুঃখ লুকাইয়া রাখতে পারে। গরীবেরা পারে না কারণ তাদের কাছে ঐসব বস্তু নাই। ঐসব বস্তু কিনার জন্য হইলেও লোকের ধনী হওয়া দরকার।

 

৭।

বুদ্ধিঃ  “ধনী হওয়ার সহজ উপায়” নামক বই লেইখা এবং তা বিক্রি করতে করতে ধনী হইতে পারেন।

 

৮।

স্কুলে থাকতে আমাদের “আমার জীবনের লক্ষ্য বা এইম ইন লাইফ” রচনা লেখতে হয়। এই সব রচনা যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিথ্যা শেখানোর ক্লাস। গৎবাঁধা কয়েকটি প্রফেশনরে সামনে রাইখা ছাত্রছাত্রীরা এইগুলা লেখে। ঐ বয়সে ঐসব প্রফেশন সম্পর্কে ভালো আইডিয়াও জন্মায় না। এইসব বন্ধ করতে হবে। মাস্টরদের উচিত ছাত্রদের বলা তুমি সত্যি যা হইতে চাও তাই লেখো, তাতেই পূর্ন মার্ক পাইবা। তাহলে বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই ‘আমি ধনী হইতে চাই’ লেখে তার জীবনের সত্যিকার এইম ইন লাইফ প্রকাশ করতে পারত।

 

৯।

“পরিশ্রমে ধন আনে, পুন্যে আনে সুখ” – প্রবাদের পরিশ্রমে ধন আনার বিষয়টা সত্য নয়। চা শ্রমিকেরা দিনান্ত পরিশ্রম করে, জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিকেরা লাইফ হেল করে পরিশ্রম করে। তাদের কি ধন আসে? আসে না। ধনের জন্য বুদ্ধি, জ্ঞাণ, ভাগ্য ইত্যাদি বেশি দরকার হয়।

আর পুন্যে সুখ আনার বিষয়টা নিয়েও কিছু বলা যাচ্ছে না। সুখ একটি আপেক্ষিক ও বিভ্রান্তিকর বস্তু।

 

১০।

সাধারনত ধনীদের বউ সুন্দর হয়। গরীবের বউ অত সুন্দর হয় না। আর হইলেও সবার ভাবী হয়ে যায়। আরেক সমস্যা। যদি আমরা চাই আমাদের সুন্দর বউয়েরা সবার ভাবী না হোক, তাহলে আমাদের ধনী হতে হবে।

 

১১।

বলা হয় দেশের উন্নতি হচ্ছে। এই উন্নতি বলতে কি বুঝায়? রাস্তাঘাট হচ্ছে, পাকা পায়খানা হচ্ছে। এইসব। এক্ষেত্রে উন্নতি হল ভাওতাবাজি শব্দ। উপযুক্ত শব্দ আমরা ধনী হচ্ছি বা ধনী হওয়ার দিকে যাচ্ছি। আমাদের টার্গেট ধনী হওয়া।

এই এক শব্দ দিয়া বুঝায় আপনার রাস্তাঘাট ভালো, পাকা পায়খানায় দেশভর্তি, কোথাও ময়লা নাই, খালি সুন্দর সুন্দর ছেলে মেয়ে হাটছে আর উঁচা উঁচা বিল্ডিং।

উন্নতি একটি দূরবর্তী শব্দ। আমাদের সর্বজনবোধ্য এবং কার্যকরী শব্দে আসতে হবে।

 

১২।

ধনী দেশ থেকে মানুষ আসলে দেখবেন তাদের কাপড় চোপরেও আলাদা ধনী ধনী গন্ধ থাকে। আমরা এমন গন্ধে দেশে ডোবা নালা খাল বিল ঘর বাড়ি সব ভরে দিতে চাই।

 

 

 

মুরাদুল ইসলাম