জিজেক পোস্ট মডার্ন অথরিটি নিয়া বলেন আগের অথরিটি…

জিজেক পোস্ট মডার্ন অথরিটি নিয়া বলেন, আগের অথরিটি বাপ পোলারে বলত, যা তর দাদীরে গিয়া দেইখা আয়, কিন্তু পোস্ট মডার্ন অথরিটি বাপ বলবে, তোমার দাদী আমাদের জন্য কত কি করেছেন, কত স্যাক্রিফাইস করেছেন, তোমার কি উচিত না তারে গিয়া দেখা। অর্থাৎ, কাজটা সে করাইতে চায়, আবার হাসিমুখে করাইতে চায়।

জিজেকের মতে এটা বেশি খারাপ অথরিটি। তা ঠিকই।

কিন্তু এইটার সমালোচনা করা যায় এইভাবে যে, আমাদের যে ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেম বা অথরিটি, তারা এইভাবে কাজ করে না। তারা পোস্ট মডার্ন অথরিটি না আমেরিকা বা ইউরোপের মত। মডার্ন ও পোস্ট মডার্ন অথরিটির মাঝামাঝি জায়গায় আমাদের অবস্থান, একটা সেনতোর দশা। গ্রীক মিথের অর্ধেক ঘোড়া ও অর্ধেক মানুষ সেনতোরের মত।

পোস্ট মডার্ন বাপ যখন ভালো আচরণ করে আদেশ দিচ্ছে, সেইটা একজন এনজয় করতে পারে। তখন তো তিনি ভালো আচরণই করেন। ইভেন সাবজেক্ট যিনি, তিনি যদি জানেনও, তাও এঞ্জয় করতে পারেন। যেমন ইউরোপ আমেরিকায় মানুষরে বৃহৎ কোম্পানিগুলা যেইভাবে বাইন্ধা রাখছে, এর মধ্যে যে ফ্লেক্সিবিলিটি আছে, সুবিধা বা আইনি সুযোগ আছে, সেটা বাহ্যিকভাবে থাকলেও, কম থাকলেও লোকে যতটুকু আছে তা এঞ্জয় করতে পারে।

কিন্তু যদি এমন হয়, অথরিটি ক্রুয়েল আপনি জানেন, এবং মাঝে মাঝে ভালো কথা বলে, কিন্তু আপনি জানেন যে, আপনি না মানলে আপনার প্রতি আগ্রাসী হবে, তখন আর সেটা এঞ্জয় করার জায়গা থাকে না। আপনার সাইকোলজিক্যাল শান্তিও থাকে না।

সে আজ ভালো কথা বলতেছে, কাল পিটাইতে পারে। পরশু ঘর থেকে বের করে দিতে পারে। আপনি তার কাছে যে বান্ধা, এটা ক্লিয়ার, সে বুঝায়ও এইটা। তারে ছাড়া আপনার যাবার জায়গাও নাই। মাঝে মাঝে এই অথরিটি বাপ, ধরা যাক খুন্তির ছ্যাকায় পোলার হাত পুইড়া যাবার পরে দাদা ঘরে বেড়াইতে আসলে, পুত্রের সাথে ভালো ভালো কথা বলে, চকলেট আইনা বলে খাও বাজান। এতে পুত্রের খুশি হবার সুযোগ নাই। কারণ সে জানে দাদা কাল চলে গেলে তার সাথে পুরান জিনিশই ঘটবে।

বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধ্বসে যায়। শ্রমিকেরা পুড়ে যায়। হরতালের দিনে বা যেকোন দিনে মানুষদের কাজ করাইতে পারে মালিকেরা। সিস্টেম একচ্ছত্র অথরিটি। আবার পশ্চিমা মানবাধিকার ইত্যাদি জিনিশের প্রভাবে ও চাপে, তাদেরও অনেক ভালো ভালো কথা বলতে হয়। কিন্তু শ্রমিক জানে তার সাথে কী ঘটবে ও ঘটছে। তার যাওয়ার জায়গা নাই। লাইফের নিরাপত্তা নাই।

মুরাদুল ইসলাম