একটি আপাত ম্যাটেরিয়ালিস্ট যুক্তি আছে এমনপ্রার্থনা + পরিশ্রম…

একটি আপাত ম্যাটেরিয়ালিস্ট যুক্তি আছে এমন

প্রার্থনা + পরিশ্রম = শস্য

পরিশ্রম = শস্য

তাহলে, প্রার্থনা = শূন্য

এই যুক্তিটি বলা হয়ে থাকে অক্ষয়কুমার মিত্রের। উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। এটা জনপ্রিয়।

প্রার্থনা আলাদাবে গডরে দিয়া কাজ করায় না কি করায় না, অক্ষয়কুমারের যুক্তি তা বুঝাতে চায়, এবং দেখাতে চায় যে প্রার্থনার আলাদা গুরুত্ব নাই। যেহেতু গডের সংশ্লিষ্টতা আছে না নাই, এই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেছে এই যুক্তি, তাই এটি ধর্মীয় যুক্তি।

এই যুক্তির বাস্তবিক সমস্যা হলো, এখানে যে ব্যক্তি পরিশ্রম করছে সে নিছক কোন বস্তু নয়। সে একটি মানবিক জীব।

বস্তগত যুক্তির খাতিরে ‘প্রার্থনা + পরিশ্রম’ এ যে পরিমান শস্য পাওয়া যাবে তা শুধু ‘পরিশ্রমে’ প্রাপ্ত শস্যের সমান ধরা যায়। কিন্তু বাস্তবে ‘পরিশ্রম’ প্রার্থনা দ্বারা প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা রাখে।

যে ব্যক্তি প্রতিদিন কয়েকবার শস্যের জন্য প্রার্থনা করবে, তার শস্য পাওয়ার ইচ্ছা তত জাগ্রত থাকবে, ফলে সে পরিশ্রমও বেশী করবে। তার ব্রেইন লক্ষ্যের দিকে এক্টিভ থাকলে সে স্মার্ট ওয়ার্কের নানা উপায় বের করতে পারবে।

তার প্রার্থনা নিজের লক্ষ্যকে নিজের কাছে মনে করিয়ে দেবে। এবং এর ফলে তার শস্য বেশী পাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। (এফারমেশন)।

ফলে, প্রার্থনা অর্থহীন হয় কেবল বস্তুগত হিসাবে, মানুষ বা মানবিক পৃথিবীতে তার গুরুত্ব আছে।

এটি মানুষকে বার বার তার লক্ষ্যের কথা মনে করিয়ে তার পরিশ্রম, অধ্যাবসায় ইত্যাদি প্রভাবিত করে, মানুষকে লক্ষ্যের দিকে স্থির রাখতে সাহায্য করে।

যেমন, বিহেভিওরাল একনোমিক্সের এক রিসার্চে (চিমা ও বাগচি ২০১১) দেখা যায়, খামে ভরে টাকা সেইভ করার প্রকল্পে সেই খামের উপরে যদি নিজের সন্তানের ছবি থাকে তাহলে সেইভিং রেইট বেড়ে যায়। এই ছবি ব্যক্তিকে মনে করিয়ে দেয় তার সন্তানের জন্য টাকা জমাতে হবে, ওটা তার লক্ষ্য।

সুতরাং, মানুষের ক্ষেত্রে এই সমীকরন হবে-

পরিশ্রম = শস্য

প্রার্থনা + পরিশ্রম = বেশী শস্য সম্ভাবনা

মুরাদুল ইসলাম