ঈর্ষার লজিক এইটা না যে ওই জিনিশ সে…

ঈর্ষার লজিক এইটা না যে, ওই জিনিশ সে পাইতেছে, আমিও পাইতে চাই। বরং ঈর্ষার মেকানিজম হইল, ওই জিনিশ যা সে পাইতেছে যেন না পায়।

আমি পাই বা না পাই সেটা বিষয় না। সে যেন না পায়।

আরও ভালোভাবে হইল, তার ওই না পাওয়াটা যেন আবার সরাসরি আমার দ্বারা না হয়।

বাইবেলের গল্প আপনারা জানেন, যেখানে বিজ্ঞ রাজা সলোমনের কাছে গেছিলেন দুই নারী। দুইজনই এক শিশুর মাতৃত্ব দাবী করলেন।

সলোমন রায় দিলেন, বাচ্চারে কেটে দুইভাগ করে দিয়ে দেয়া হউক।

আসল মা কাইন্দা বললেন, দরকার নাই, ওরেই দিয়া দেন।

নকল মা উল্লাসে বললেন, রাজা আপনার রায়ই ঠিক, বাস্তবায়িত হইলেই আমি খুশি।

তখন কিং সলোমন বুঝে গেলেন কে আসল মা ও কে নকল মা। এই গল্প বলা হয় রাজা সুলেমানের প্রজ্ঞা বুঝাইতে। যদিও এই গল্পের মূল মেসেজ এটা হয় না।

কারণ রাজা সলোমনকে ওই দুই নারী বিজ্ঞ মনে করেন নাই প্রথমত। আসল মা মনে করেন নাই কারণ তার সন্দেহ ছিল নকল মা রাজারে ভুল বুঝাইতে পারে। নকল মা তো রাজারে বিজ্ঞ মনে করেনই নাই, করলে তিনি এই বিচারে আসার সাহস করতেন না। কিন্তু দুই মা’ই রাজারে ক্ষমতাবান মনে করতেন।

ক্ষমতাবান রাজা যখন রায় দিলেন বাচ্চারে কাটা হোক, নকল মা এতে আনন্দিত হয়ে উঠেন। মেনে নেন। তিনি কিন্তু বাচ্চাটারে চান নাই শুরু থেকেই। তিনি চাইছেন যাতে আসল মা বাচ্চাটারে না পায়। ফলে বাচ্চাটারে কাটা হইলে তার আশাই পূর্ণ হয়। এটাই ঈর্ষার মেকানিজম।

তার উপর, রাজার রায়ে হইতেছে। অর্থাৎ নিজের যুক্ত হইতে হইতেছে না।

এই মেকানিজমটা ঈর্ষা কীভাবে কাজ করে এর আদর্শ রূপ।

একজন দামী গাড়ি কিনছে, মানুষ চায় তার গাড়ি যেন তার কাছ থেকে ছিনায়ে নেয়া হয়। আবার নিজে ছিনাইতে যাইতে চায় না। কারণ নিজের কাছে সে সৎ ও ভালো মানুষ। সে চায় কোন এক দৈব শক্তি বা ক্ষমতাবানের ক্ষমতার বলে যেন কাজটা ঘটে যায়। যেন ওই লোকটি বঞ্চিত হয়।

এইটাই এনভির সুখ।

মানুষরে বঞ্চিত করার সুখ।

কী হিংসে হয়, এর লজিকও সেইম।

সুন্দর জায়গায় বেড়াইতে গেলাম বা খাইতেছি দামী জিনিশ। ছবি দিলাম। এর মধ্যে উহ্য মেসেজ, তোমরা তো খাইতে পারতেছ না, ফকুন্নিরা, কি হিংসে হয়? এই যে তোমরা খাইতে পারতেছ না, তোমরা বঞ্চিত হইতেছ, এতেই আমার সুখ। বঞ্চিত আছো তোমরা এইটা জানার সুখ।

তো, যারা দেখতেছে, তাদের মধ্যে ঈর্ষা জাগ্রত হবে। তারা তাদের এই অশান্তি দূর করতে নিজেরাও অন্যদের বঞ্চিত করার সুখ নিতে চাইবে। ফলে তারাও এমন কিছু দেখাবে, যা অন্য আরও অনেকের নাই।

আরও অনেকে সেটা দেখে ঈর্ষা অনুভব করবে ও অশান্তি নিরসনকল্পে নিজেদের কিছু জিনিশ দেখাবে আরও কিছু লোকরে ঈর্ষান্বিত করতে।

এভাবে সাইকেলটা চলে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ঈর্ষার চক্র। পরশ্রীকাতকরতার ফল্গুধারা।

এতে কি সুখ হয়?

না, কারণ এতে ব্যক্তির সুখের বিন্দু তো বদলাইতে থাকে, তার খেয়াল রাখতে হয় অন্যরা বঞ্চিত হইতেছে কি না। ফলে, সে নিজে কী চায় এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় অন্যরে বঞ্চিত করার বাসনা।

মুরাদুল ইসলাম