অলসতার পক্ষে

এক

রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা আছে দুরন্ত আশা। কবিতাটি আমি মুখস্ত পারতাম, এখন শেষের দিকে দুয়েক লাইনে বেড়াছেরা লাগে। এই কবিতাটি অলসতার বিরুদ্ধে।

কবি প্রথমে বাঙালীদের অলসতার বিবরণ দিয়েছেন। এরপর বলেছেন আরব বেদুঈনদের কথা। যারা চরণ তলে বিশাল মরু রেখে ঘোড়া ছুটিয়ে বর্শা হাতে ও ভরসা প্রাণে নিয়ে ছুটে বেড়ায়। কবি বলেছেন ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুঈন।

কিন্তু, আমি সুস্থ চিন্তা ভাবনায় দেখলাম, এখানে পয়েন্ট কী? বিশাল মরুভূমিতে উত্তপ্ত বালুর উপর দিয়ে ঘোড়া দৌড়াইয়া লাভ কী?

এর চেয়ে বাঙালী তৈল ঢালা স্নিগ্ধ তনু, নিদ্রারসে ভরা, জন দশেকে মিলে তক্তপোষে বসে জটলা করা তথা আড্ডা দেয়া; এটা তো আকাঙ্খিত নাই শুধু, স্বর্গীয় বলা যায়।

আমি এই কবিতায় উলটা আলস্যের মাহাত্মই দেখতে পাই।

দুই

আপনার যা করতে ভালো লাগে তা করা পরিশ্রম নয়। কারণ ওইখানে পরিশ্রম বা খাটার বোধ আপনার আসে না। বরং তা কইরা মজা পান। ফলে তা একপ্রকার আনন্দ উৎপাদন।

 

তিন

অনেকে বলে থাকেন আলস্য সকল দোষের মূল বা অলসের মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। এই কথাটি ডেনিশ গোল্ডেন এইজেও প্রচলিত ছিল। এজন্য মহান দার্শনিক সোরেন কীয়ের্কেগার্ড এর বিরুদ্ধে লিখেছেন। তিনি বলেছেন আলস্য নয়, একঘেয়েমি বা বোরডম হইল দোষের মূল। অলসতায় দোষ নেই।

বিরক্তির জন্ম হয় যখন ব্যক্তি নিজেকে পছন্দ করেন না, তখন। নিজের সঙ্গ তখন আর তার ভালো লাগে না। এই বিরক্তিবোধই ব্যক্তিকে দোষের দিকে নিয়ে যায়।

আলস্য হচ্ছে ক্রিয়েটিভিটি, চিন্তা, এবং এমনেই কিছু না করার মূল।

 

চার

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় জিনিসটা হলো আলস্য। আলস্য উপভোগ করুন।

মুরাদুল ইসলাম