বাংলাদেশের ভাষা ও বাঙালী বিষয়ক

ভাষার সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য এনসাইক্লোপিডিয়া অনুযায়ী বাংলাদেশে ভাষার সংখ্যা ৪১। এর মধ্যে দুইটা হচ্ছে চিটাগোনিয়ান এবং সিলেটি।

চিটাগোনিয়ান ভাষায় কথা বলেন রাঙামাটি, কক্সবাজার, বান্দরবান এবং চট্টগ্রাম জেলার মানুষেরা। এটি চাটগাইয়া নামেও পরিচিত। বাংলার লগে এর লেক্সিক্যাল সিমিলারিটি ৪৩-৬৪%। ভাষাভাষী লোকের সংখ্যা ১৩,০০০,০০০ জন।

লেখার ধরণঃ আরব, আরব নকশা স্ক্রিপ্ট, ল্যাটিন

সিলেটি ভাষায় কথা বলেন হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলাসহ দেশের প্রায় ১১,৮০০,০০০ জন মানুষ। আসামী ভাষার সাথে এর মিল আছে। বাংলার লগে লেক্সিক্যাল সিমিলারিটি ৭০%।

লেখার ধরণঃ বাংলা স্ক্রিপ্ট, ল্যাটিন স্ক্রিপ্ট এবং নাগরি লিপি।

এইভাবে ৪১ টা ভাষা আছে বাংলাদেশে, ৩৯ টা ইন্ডেজেনিয়াস। এসব ভাষায় যারা কথা বলেন তাদের অধিকাংশের মাতৃভাষা বাংলা নয়।

 

“বাঙ্গালী বলিলে সমগ্র বঙ্গদেশের মধ্যে যে কোন অধিবাসী, জন্ম ও সংস্কারগত সম্বন্ধে বাঙ্গালা দেশ যাহার স্বদেশ ও বাঙ্গালা ভাষা যাহাদের মাতৃভাষা, এরূপ ব্যক্তিকে বুঝায়। বঙ্গের অধিবাসীর “বাঙ্গালী” নাম মুসলমান রাজত্ব কালে প্রচলিত হয়। সেন বংশীয় রাজাদিগের আমলে তৎপূর্বে রাঢ়ীয়, বারেন্দ্র প্রভৃতি ও গৌড়ীয় নাম অভিহিত হইত।”

– শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস রচিত বাঙ্গালাভাষার অভিধান।

উপরিউক্ত উক্তিকে বাঙ্গালীর সংজ্ঞা হিসেবে নিলে ভুল হবে। কারণ বঙ্গ নামে প্রাচীনকাল থেকেই ভূখন্ডের নাম ছিল। ভাষার নাম থেকে ভুখন্ডের নাম হয় নাই সম্ভবত। নিচু এলাকা বলে আল দিয়ে রাস্তা নির্মান হত, সে থেকে বঙ্গ+আল = বঙ্গাল এবং তার থেকে বাঙ্গালা। (আইন ই আকবরী)। এর মানে ভাষা থেকে স্থানের নাম হয় নাই। স্থান থেকে ভাষার নাম হইছে। ইলিয়াস শাহের আমলে (১৩৪২-৬০) পুরা রাজ্যের এক নাম “বাঙ্গালা” হয়। সেই রাজ্য এক ভাষা ছিল নাকী!

ফলে শ্রী জ্ঞানেন্দ্রমোহন যে বলেছেন বাঙালী হতে হলে মাতৃভাষা বাংলা হতে হবে এটা ভুল। বাঙ্গালী হইতে হলে ঐ বঙ্গ+আল যুক্ত স্থানের বাসিন্দা হইতে হবে। এখন প্রশ্ন, তাইলে পাহাড়ীরাও কি বাঙালী? উত্তর, না। পাহাড়ীরা পাহাড়ী এলাকায় থাকেন। সেইখান নিচু এলাকা না, আল দিয়াও রাস্তা নির্মান করতে হইত না কোনকালে। তাদের আলাদা আলাদা জাতিভিত্তিক পরিচয় আছে।

মুরাদুল ইসলাম