প্রেম, শাদা স্কিন ও হীনম্মন্যতার গল্প

ঢাকায় কিছুদিন আগে এক এনজিও কর্তৃক জাপানি শিক্ষার্থীদের এনে রাস্তা পরিষ্কার আন্দোলন টাইপের কিছু একটা করার চেষ্টা হয়েছিল। জাপানিদের ঢাকার রাস্তা পরিস্কার করতে দেখে ফেসবুকের কিছু বুদ্ধিমান লোক এবং বিরাট সংখ্যক সাধারণ এদেশীয় মানুষ শরম পেয়েছিলেন। তখন আমি একটা লেখা লিখেছিলাম “রাস্তা পরিষ্কারে জাপানি এবং মধ্যবিত্ত হীনম্মন্যতার হাঁপানি“।

এটা আমার খারাপ লেগেছিল। তাই এই নিয়া একজন মুস্তাফিজরে বলছিলাম। সে শুনে বলল, “কিছুদিন আগে ইউএস এম্বেসী একটা ছবি পোস্ট দিছে। আম্রিকান এক শাদা মাইয়া এক রিকশাওলার লগে। এর নিচে হাজার হাজার কমেন্ট দেইখা আমি ভাবছিলাম শাদা মাইয়া মনে হয় রিকশাওলারে বিয়া করছে। পরে দেখি বিয়া না, খালি ফটু তুলছে। তাতেই হাজারো জনতা ঝাঁপাইয়া পড়ছে স্যালুট জানাইতে! আর মুগ্ধতায় গদগদ হইয়া তারা শেয়ার দিতেছে।”

মুস্তাফিজের মনে করা কাহিনী এইবার সত্যি হইছে। কিছু অনলাইন পত্রিকা এই ছবি দিয়া নিউজ করছে, প্রেমের টানে রিকশাওলাকে বিয়া করলেন আমেরিকান শাদা মাইয়া।

নিউজফিডে অনেক শেয়ার দেখতেছি। প্রেমের মহিমা কীর্তন করতেছেন অনেকে। প্রেম এইখানে যেন বড় মহিমাময় হয়ে যায়, যখন শাদা মাইয়া বিয়া করেন রিকশাওলারে, হোক না কাল্পনিক। বাংলাদেশের শাদা টাইপের কোন পোলা যদি আফ্রিকান কালা এবং গরীব কোন মেয়েরে প্রেমের টানে বিয়া করত তাইলে জনমনে প্রেমের মহিমার অনুভূতি নাড়া দিত কী না এ নিয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে।

প্রেম সংস্লিষ্ট কত ফিকশনে যে লোকে মনে মনে বিশ্বাস করে! কিন্তু এমন সত্যি কাহিনী কয়টা পাইবেন যেখানে প্রেমের টানে বিরাট বড় ব্যবসায়ীর মেয়ে রিকশাওলারে বিয়া করে? এইগুলা কী রূপকথার গল্প নাকী, রাজকন্যা ভাইগা যাবে কাঠুরের ছেলের লগে? এমন কোনদিন হয় নাই। আগেকার বাংলা ছবিতে দেখা যাইত কিছু কিছু। নায়ক গ্যারেজে কাজ করে, নায়িকা ধনীর একমাত্র মাইয়া গাড়ি ঠিক করতে আসে। ফাইজলামী আর কী। বাস্তবে এরকম কিছু হয় না। হইলেও তা দূর্ঘটনা।

জনমনে প্রেম সংস্লিষ্ট কুসংস্কারে বিশ্বাস থাকা ভালো না।

ও ফ্রয়েড! আপনি তো জানেন, জগতে প্রেম বলে কিছু নাই।

  • ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫

মুরাদুল ইসলাম