টেক ভবিষ্যত

গুগলের যে ফিউচার পরিকল্পনা দেখলাম, গুগল হোম, এলো বা ডুও ; এইগুলা মানুষের লাইফ কত ইজি করবে তার চাইতে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হইল এট লাস্ট এইগুলা আরো নিবিড়ভাবে ভোক্তা বানানোর প্রক্রিয়া। গুগলের প্ল্যান দেইখা এইটা ধারণা করা যায় যে ফেসবুকও একইরকম বা তার চেয়ে ইন্টারেস্টিং এবং কর্পোরেট বান্ধব কিছু ব্যবস্থা আনতেছে সামনে। ফলে চ্যাট করতে করতে চ্যাটের মাঝেই বিজ্ঞাপন দেখা থেকে শুরু করে সবখানেই আপনে অপশন পাইবেন। এই চাইরটা বা পাঁচটা অপশনের মাঝে আপনে কোন একটা লাইক করবেন।

এই অবস্থায় যেই বইটা মানুষের পড়া উচিত তার নাম হইল দ্য প্যারাডক্স অব চয়েজ। আমেরিকান সাইকোলজিস্ট বার্নি শোয়ার্জের বই।

আপাতত হয়ত সব প্রযুক্তি আমাদের কাছে আসবে না, কারণ আমরা অত তাদের সরাসরি ভোক্তা হইয়া উঠি নাই। উন্নয়নশীল গরীব তো আমরা। কিন্তু গ্লোবালাইজেশনের টানে তো কিছু হইতেছে, ফেইসবুকের বিস্তারটাই দেখেন, ক্যামন বৈপ্লবিকভাবে ছড়াইয়া যাইতেছে বুকে ও পিঠে নিয়ে বিজ্ঞাপন। গুগল বা ফেইসবুক এইগুলারে এইভাবে দেখেন যে এগুলার জন্য আপনার দেশে একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, একটা সার্চ ইঞ্জিনের সম্ভাবনা নষ্ট হইল।

এখন যদি আমরা একটা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর দুনিয়ার কথা চিন্তা করি, একটু সাই ফাই ঘরানার। গ্লোবাল ভিলেজিও এক বিশ্ব, এক গ্রামই যেন। ভাষা ইংরাজি, প্রায় সব দেশের এলিটেরা এই ভাষা জানে আর কারেন্সি ধরেন ডলারে। তখন বেশী মানুষ অধ্যুষিত উন্নয়নশীল দেশের লোকেরা শ্রমিকই হবে, এখন যেমন আছে পরোক্ষভাবে। যেহেতু উন্নয়নশীল দেশেরা গরীব এবং চিরকালের নীতি হইল ধনী গরীব মিলেমিশে থাকলে গরীব ধনীর কাজ করে।

মিলামিশাটা যদি না হইত, মানে একটু কম, যেমন এই ফেসবুক বা গুগল এইগুলা ধনীর প্রোডাক্ট। করল না গরীবে ব্যবহার। তারা নিজেদের নেটওয়ার্ক বানাইল, একেবারে সুপার হবে না প্রথমে আস্তে আস্তে হবে, চিন টাইপের প্রকল্প আর কি। মানুষ তো মানুষই, চিনের মানুষরে আলাদা গিলুওয়ালা এমন ভাবা যায় না যৌক্তিকভাবেই। আর ধনী দেশের সিলিকন ভ্যালীতেও আপনেরা দেখলেন যে সাইডক্যার ফল করল, বড় ধনী এবং অভিজ্ঞ ইনভেস্টর রিচার্ড ব্র্যানসন ইনভেস্ট করার পরেও, যেইটা নিয়া নিউ ইয়র্কারে লেখছিলেন ওম মালিক, যে এই ইন্টারনেট প্রযুক্তির দুনিয়া হলো জেতা ঘোড়া সব নিয়া যাবে এমন দুনিয়া।

এই ব্যাপারটা পিটার থিল তার জিরো টু ওয়ানেও বলছেন, সিলিকন ভ্যালী বা যেইখান থেকেই করেন, নয়া কাস্টমার তৈরী আর মনোপলিটা রাখতে হবে এবং ভুলেও জেতা ঘোড়ার লগে প্রতিযোগীতায় যাওয়ার কথা ভাইবেন না। ভাবলে ভ্যালীর ডট কম ক্রাশের কথা স্মরণে নিয়েন।

এই অবস্থায় জেতা ঘোড়ারা, বড় ঘোড়ারা মাঠে ময়দানে থাকলে, আমাদের শেষপর্যন্ত এদের চাকর হওয়ারেই সাফল্য হিসেবে মাইনা নিতে হবে।

আর এইগুলা সরকারী পলিসির ব্যাপার মেইনলি। জনসাধারণ আকাট মূর্খ হইলে সরকারের সুবিধা হয়, যদি সে সরকার দূর্নীতিপরায়ণ হইয়া থাকে। সরকার উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ যদি তৈয়ার না করে, যদি বিদেশীদের নিয়ন্ত্রণ না করে তাইলে ভবিষ্যত ঝরঝরা। ঝরঝরা বলতে ঐ চাকর হওয়াই নিয়তি হইয়া যায় আর কি।

এইজন্য যদি দেখেন আপনার গবর্নমেন্ট আছে অন্যতালে, দেশের মধ্যবিত্ত আকাট মূর্খ, ইয়াং জেনারেশন আছে ভোক্তা হইবার তালে; তাইলে আর এইসব নিয়া অত ভাইবেন না। নিজে নিজের পথ দেখেন, আলটিমেটলী ক্যাপিটালিস্টদেরও বুদ্ধিমান লোক দরকার‌ তাদের সাথে গিয়া মিলেমিশে কাজ করেন। আর সোজা ধনী হইয়া যান।

মুরাদুল ইসলাম