ইভিল কীঃ আইখমান ইন জেরুজালেম

 

‘আইখমান ইন জেরুজালেম: আ রিপোর্ট অন দ্য ব্যানালিটি অব ইভিল’

রাজনৈতিক দার্শনিক হানা আরেন্ড এর লেখা বই। এই বইটির টাইটেল যেভাবে বইয়ের সারবস্তু তুলে ধরেছে, আমি এমন আর দেখি নি। ব্যানালিটি অভ ইভিল। অর্থাৎ, ইভিল বলতে আমরা যা বুঝি তা ব্যানাল!

হানা নিজে ইহুদি, তিনি নিউ ইয়র্কার পত্রিকার পক্ষে এডলফ আইখম্যানের বিচার পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন। আইখম্যান ছিল হিটলারের বড় অফিসার। ইহুদি নিরীহ নিরপরাধ লোকদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোর দায়িত্বে ছিল সে। পৃথিবীর এই বর্বরতম একটি হত্যাকান্ডে নিজ হাতে সহায়তা করে গেছে আইখম্যান।

যুদ্ধের পরে সে পালিয়ে ছিল। ইজরাইল রাষ্ট্র হওয়ার পর মোসাদের জন্ম হয়। মোসাদের টপ লিস্টে ছিল এই আইখম্যানকে ধরা। বহু চেষ্টার পর আর্জেন্টিনা থেকে মোসাদ আইখম্যানকে কিডন্যাপ করে বা ধরে নিয়ে আসে।

এ নিয়ে আর্জেন্টিনার সাথে ইজরাইলের অনেক কূটনৈতিক ঝামেলা হয়। অপরাধী ধরেছে এজন্য নয়, আর্জেন্টিনার পুলিশকে না জানিয়ে এমন কান্ড করা আন্তর্জাতিক আইনে অন্যায়। কিন্তু আর্জেন্টিনা ইজরায়েলের সাথে পেরে উঠে নি।

আইখম্যানের বিচার শুরু হয় জেরুজালেমে। শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ইজরায়েলের একমাত্র মৃত্যুদন্ড।

এই বিচার দেখছিলেন হানা আরেন্ড। তিনি লক্ষ করলেন, আইখম্যান অন্য সব লোকের মতই স্বাভাবিক একজন মানুষ। সে স্বীকার করে নিল সে যা যা করেছে। কিন্তু জানাল সে এমন কিছুই করে নি যা উপর থেকে নির্দেশ দেয়া হয় নি।

অর্থাৎ, এই আইখম্যান এমন ব্যক্তি যে উপরের নির্দেশ মেনে চলে। অন্ধ আনুগত্য করেছে। তার কেরিয়ারের উন্নতির জন্য, হয়ত ভালো পোস্ট, মান সম্মানের জন্য। যেমন স্বাভাবিক লোকেরা উপরের নির্দেশ মেনে থাকেন।

মানুষ অন্ধভাবে যখন অথরিটি মানে তখন এর প্রভাব হয় মারাত্মক। ইভিল বা শয়তান হিসেবে এইসব আনুগত্য মানা লোকদের দেখলে ভুল হবে, কারণ এরা অন্য সবার মতই ভালো-মন্দ মেশানো লোক। ইভিল খুবই ব্যানাল একটি বিষয়।

আমাদের সচেতন থাকা উচিত অন্ধ আনুগত্যের ব্যাপারে।

যখন আমরা ব্যক্তিকে ইভিল হিসেবে চিত্রায়িত করি, তখন আমরা ধরে নেই ঐ ব্যক্তির কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারনে সে ইভিল হয়েছে। তখন আমরা বুঝতে পারি না যে অন্ধ আনুগত্য (যেকোন মতাদর্শ, শাসকের প্রতি) আমাদেরকে বা আমাদের মত গুড পিপলদেরও আইখম্যান বা কাদের মোল্লা বানাতে পারে।

সংযুক্ত পাঠঃ

অথরিটির ভুল প্রভাব থেকে বাঁচার উপায়।

মুরাদুল ইসলাম