আমাদের মধুর ইতিহাস

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন একটি দুর্বোধ্য এবং বাজে শব্দ। কোলকাতা বা ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেল নিয়ে কথা বলতে গেলে বেশিরভাগেই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বুঝে। ইন্ডিয়ান যে সংস্কৃতি এর সাথে আমাদের অনেক মিল আছে। যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কথা বলা হয় ওইটা পশ্চিমা সংস্কৃতি, তা প্রবেশ করছে বলিউডে, এখন বলিউড হয়ে আসলেও অইটা পশ্চিমা এবং তা হলিউড হয়েও আসছে। ফলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন জাতীয় টার্মের চিন্তা না করে, এই গ্লোবাল ভিলেজীয় সংস্কৃতির কালে কাজের কথা বলা দরকার।
এবং কাজের কথা অর্থনৈতিক।

বাংলাদেশের খামারীরা মধু উৎপাদন করেন। এই মধু ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। তারা এর বোতলজাত করে নাম দেন ডাবর মধু। ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলোতে এর বিজ্ঞাপ দেয়া হয়। বাংলাদেশের দর্শকেরা দেখতে দেখতে এর ভক্ত হয়ে যান। এবং এরপরে বাংলাদেশে একচেটিয়া বাজার তৈরী হয় ডাবর মধুর। বাংলাদেশের মিডলক্লাস ডাবর মধু খাইতে থাকেন।

এখন কি আপনি বলবেন ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ীরা ভুল করছেন? অবশ্যই না, ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের কাজ ঠিক, কইয়ের তেলে কই ভেজে বেশী লাভ করা গেলে এটা ব্যবসার জন্য ভালো।

দোষ আপনার, হে নিরীহ মিডলক্লাস। বিনোদনের জন্য ইন্ডিয়ান চ্যানেল দেখেন। এবং এগুলোর বিজ্ঞাপন ধীরে ধীরে আপনার মনোজগতে তাদের পণ্যকে ঢুকিয়ে দেয়। আপনিও স্থান দেন। আপনি এর ভক্ত হয়ে যান।

মধু একটা উদাহরণ মাত্র।

এখন চিন্তা করেন আপনার দেশে যদি মধুর বা এরকম আরো পণ্যের ইন্ডাস্ট্রি হইত, একটা দুইটা ভালো ব্র্যান্ড থাকত এবং আপনি যদি এগুলোর ভোক্তা হইতেন তাতে কি লাভ হইত? দেশের অর্থনীতি শক্ত হইত, অনেক লোকের কর্মসংস্থান হইত, আপনাদের ইন্ডিয়ার মুখাপেক্ষী হইয়া থাকতে হইত না আর। এমনও হইত পারত দেশীয় ব্র্যান্ডগুলা তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য দেশীয় চ্যানেলে টাকা দিত, ফলে হয়ত ভালো বিনোদনমূলক প্রোডাকশনও হইত এই দেশে।

কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে আপনারা, নয়া মধুর ব্র্যান্ড গইড়া উঠারে কঠিন করে দিয়েছেন। ইন্ডিয়ান চ্যানেল দেখতে দেখতে এবং তাদের পণ্যেরত ভোক্তা হতে হতে। উপরন্তু আগামীতে দেশীর ব্র্যান্ড যা আছে এরাও ইন্ডিয়ান সিরিয়ালে বিজ্ঞাপন দেবার পথ খুঁজবে, কারণ ব্যবসা তো তাদের করতে হবে।

মুরাদুল ইসলাম