মাইয়াদের সিগারেট খাওয়া

এইটা এক মারাত্মক সমস্যা হিশাবে উইঠা আসে আমাদের ফেইসবুক সমাজে। আগেও দেখছি পশ্চিম বাংলার গ্রুপে এই নিয়া লোকদের আপত্তি এবং তার প্রতিবাদের খেলা। জ্যারেড ডায়মন্ড থিওরী দিছিলেন, বা জাহাবির সেক্সুয়াল সিলেকশনের হাইপোথিসিসের আলোকে বলছিলেন, পুরুষেরা সিগারেট খায় বা আত্মবিনাশী কিছু কাজ করে বিপরীত লিঙ্গরে আকৃষ্ট করার জন্য, অবচেতনে। যদিও তার এই ধরনের সিগন্যাল অযৌক্তিক এবং অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে তা যেমন কাজ করে তা মানুষের ক্ষেত্রে করে না। কারণ মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি বাইড়া গেছে।

পুরুষের সিগারেট খাওয়া বা আত্মবিনাশী কাজের মেসেজ এই, দেখো আমি এইগুলা কইরাই টিইকা আছি। অর্থাৎ, আমার জীন ভালো। অর্থাৎ, তুমি আর আমি মিলে ভালোমন্দ কিছু করে যদি সন্তান উৎপাদন করি তাইলে এরা ভালো জীন পাইয়া ধরাধামে টিইকা থাকবে।

মোটের উপর এইরকম ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন জ্যারেড ডায়মন্ড। এইটা একদিক থেকে ব্যাখ্যা, কংক্রিট সত্য কিছু না এবং আরো নানা ব্যাখ্যা সম্ভব মানুষের আত্মবিনাশী কাজের।

আমি এইটাই বিবেচনায় নিলাম, এবং এর মাধ্যমে দেখা যাইতে পারে কেন আমাদের পুরুষেরা সিগারেট খাইতে থাকা নারীদের ফটো দেখলে আগ্রাসী হইয়া উঠেন তার কিছু কারণ সম্পর্কে। এইটা হইতে পারে যে, তারা মানতে চান না নারীদের সারভাইভালের ক্ষমতা, বা তার এইরকম প্রকাশ তাদের পুরুষত্বরে আঘাত করে অবচেতনে। এইটা যে অবচেতন পুরুষত্বরে আঘাত করে তার আরেকটা প্রমাণ হইল কলকাতার ফিল্মে দেখবেন নারী স্বাধীনতা দেখাইতে মহিলাদের সিগারেট খাইতে দেখা যায়। অর্থাৎ, পরিচালক এইটা ব্যবহার কইরা সহজেই স্বাধীন নারী বা নারীবাদ ইত্যাদি বুঝাইয়া দিতে চান। অর্থাৎ, নারীর সিগারেট খাওয়া একটা বিপ্লব হইয়া দাঁড়ায়, কেন দাঁড়ায়? কারণ এর প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আছে এতদঞ্চলের পুরুষতন্ত্রের।

প্রাচীনকালের ছবি, হুকা খাইতে আছেন মহিলারা, অথবা গ্রামের দিকে অনেক মহিলারা হুকা খাইতেনও। এগুলা তখন চা পান সুপারি ইত্যাদির মত ছিল। তাই তখন এইটা দিয়া সিগনালিং এর কাজ চলে নাই। যখন আধুনিক কালে দেখা গেল সিগারেট খারাপ, খাইলে ক্ষতি হয়; তখন তার সিগনালিং পাওয়ার বাড়ল।

আবার দেখবেন যারা দিনমজুর মহিলা আছেন, তারা সিগারেট খাইলে এবং তার ছবি যদি আসেও, মিডলক্লাস পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এতে কোন প্রতিবাদ করবে না। কিন্তু কোন মিডলক্লাস মাইয়া বা মহিলা যদি সিগারেট খান, বা তার ছবি আসে; তখন পুরুষকূল প্রতিবাদ করেন। অর্থাৎ, যেইখানে তাদের সেক্সুয়াল প্রোডাক্টিভ সম্ভাবনা আছে, তাদের প্রতিবাদ সেইখানে।

মুরাদুল ইসলাম