প্রেমের টানে

প্রেমের টানে আমেরিকা থেকে একজন রমনী বাংলাদেশে চলে এসেছেন এবং এদেশীয় এক বঙ্গসন্তানকে বিয়া করছেন। এই নিউজ প্রায় সব পত্রিকাতেই দেখা যাইতেছে, আর তার শেয়ার চলতেছে। ইস্যুহীন সময়ে এইটাই জনপ্রিয় নিউজ। আশাহীনতার কালে আশাজাগানিয়া। এই নিউজের এত জনপ্রিয়তা দেখে দেখতে লাগলাম প্রেমের টানে আরো কী কী হয় এই দেশে। দেখার মাধ্যম মিডিয়াতে আসা নিউজ।

সেইসব হতে জানা গেল, ভারত থেকেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এসেছেন নারী প্রেমের টানে। প্রথম আলোতেও নিউজ হইছে কিন্তু সেই নিউজ জনপ্রিয়তা পায় নাই। অষ্ট্রেলিয়া থেকেও প্রেমের টানে নারী এসেছেন, মালয়সিয়া থেকেও এসেছেন, আয়ারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নারী এসেছেন। তারা পপুলার হইতে পারেন নাই।

আমেরিকা থেকে আসা এই নারী, এলিজাবেথ ও তার প্রেমকাহিনী একচেটিয়াভাবে দখল করে আছে মিডিয়ার প্রেমের টান। প্রেমের টান নিয়া দেখতে গিয়া আরো দেখলাম নয়াদিগন্ত টাইপ পত্রিকা মাঝে মাঝে নিউজ করে প্রেমের টানে ধর্মবদল। সেই নিউজে হিন্দু নারী প্রেমের টানে মুসলিম হইয়া নাম বদলান। প্রেমের টান বা নির্দোষ প্রেম যে কেবলই পবিত্র প্রেম নয়, তা এইসব নিউজ দেখেই বুঝা যায়। প্রেমের টানের মাঝেও পলিটিক্সের টান থাকে, ইতিহাস মতে অরাংজেবকে তার যোধপুরী বেগমের ঘরে টুপি খুইলা প্রবেশ করতে হইত।

প্রেমের টানে ভারতীয় নারীরা আসেন অনেক ঝক্কি ঝামেলা সহ্য করে। এইসব নিয়া কোন থ্রিলার লেখক থ্রিলারও লেইখা ফেলতে পারবেন, রোমান্টিক থ্রিলার। দালালের হাতের নিচ দিয়া প্রায় জীবন বাজি ধইরা এরা আসেন। দূর বৈদেশ থেকে প্রেমের টানে নারীদের আসা নিউজের পপুলারিটির ক্ষেত্রে কেবলই প্রেম যদি কারণ হইত, তাইলে এইসব নিউজই বেশী জনপ্রিয় হইবার কথা। কারণ প্রেমের জন্য এনাদের ত্যাগ বেশী। কিন্তু এইসব নিউজ জনপ্রিয় হয় না। নিউজের ভোক্তা হয়ত ভাবে, “ইন্ডিয়া থন আইছে, ধুর! এ আর এমন কী!”

ফলে আমরা দেখতে পাইতেছি প্রেম নয়, নারী কোথা থেকে আইতেছেন তা বিবেচ্য। আর স্থান হিসেবে ট্রাম্পের দেশ আমেরিকা সর্বোচ্চ সম্মান পাইয়া থাকেন। ইংলান্ডও হয়ত পাইবেন এমন। চামড়া হোয়াইট হইতে হবে।

এই প্রেমের টানের নিউজ, অর্থাৎ এলিজাবেথ ও তাহার প্রেমিকের কাহিনীর জনপ্রিয়তা একটা ইন্টারেস্টিং সম্ভাবনা আমাদের দেখায় বলে মনে হইতেছে। এলিজাবেথরে দেখতে দূর দুরান্তের গ্রাম হইতে মানুষেরা আসতেছেন। ফটোও তুলতেছেন, জামাই বউরে আশীর্বাদ কইরা, সম্ভবত। এমন ঘটনা যদি বেশী কইরা চাউড় হয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তাইলে এডভেঞ্চার প্রিয় আমেরিকান মাইয়ারা বাংলাদেশে প্রেম করার প্রতি আকৃষ্ট হইবেন। যত প্রেম তত সম্ভাবনা। আমি যতটুকু তাদের কালচার নিয়া বুঝি, তাতে মনে হয় এডভেঞ্চার তাদের জন্য প্রয়োজনীয় হইয়া পড়ছে। মিখায়েল হানেকে ইন্টারভিউতে বলছিলেন তাদের পশ্চিমের লাইফে এডভেঞ্চার নাই, সব ম্যাড়ম্যাড়ে। তো এডভেঞ্চার প্রিয় আম্রিকান মাইয়ারা যখন দেখবেন, একটা প্রেম কইরা, দেশ ভ্রমণ কইরা সাথে দারুন এডভেঞ্চার ফ্রীতে পাওয়া যায়, তারা তা লুইফা নিতে পারেন। বিশেষত ড্রাগ ট্রাগ যারা ছাড়তে চান তাদের ক্ষেত্রে এইটা কাজের হবে।

আর বাংলাদেশের যুবক বেকারগোষ্ঠীর জন্য এইটা দারুণ কাজের ক্ষেত্র হইয়া উঠবে তখন। সাথে সাথে কুইকলি পপুলার হওয়ার সুযোগ। রূপকথায় যাকে বলে রাজ্য, রাজকন্যা আর আলাদীনের প্রদীপ, সব একসাথে। আর বিয়াটাও টিইকা যাইতে পারে। কারণ বিয়ারা রহস্যময়। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং আমেরিকার সাথে আমাদের গভীর ও প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনে তা হেল্প করবে। অনেকে ভুরু কুচকাইতে পারেন, যুবকেরা কী এই কাজ করবে, এত হীনকাজ ইত্যাদি বইলা। কিন্তু তাদের উদাহরণ দেয়া যাবে ইতিহাস থেকে। আগে রাজারা বিয়া করতেন রাজ্যের জন্য। প্রভাবশালীরা বিয়া করতেন প্রভাব ও সম্পত্তির জন্য। বিয়া ধনী হইবার একটা উপায়ই ছিল ইতিহাসে। আর লি কুয়ান বইলা গেছেন আগামীতে জনসংখ্যাই হবে মূল পাওয়ার। সেই আগামী চইলা আসছে। আমাদের পাওয়ার, অর্থাৎ জনশক্তির কাজে লাগার টাইম এখন।

শেষকথা হইল, লক্ষণীয় বিষয় প্রেমের টানে নারীরা দেশে আসার খবর আসে, পুরুষেরা অন্য দেশে প্রেমের টানে যান কি না কে জানে। হয়ত যান কিন্তু তার খবর আসে না বা পাওয়া যায় না। অন্যদেশের পত্রিকাতেও পাওয়া যাইবে না সম্ভবত, যেহেতু বাংলাদেশ অত পাওয়ারফুল কান্ট্রি না। পাওয়াওরফুল ও ধনী দেশের লোকের প্রেমের টান শক্ত হইয়া থাকে, নিউজের আতিশয্যে তাই মনে হয়।   (জানুয়ারী ২২, ২০১৭)

মুরাদুল ইসলাম